ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অরক্ষিত ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৯ নভেম্বর ২০২০  
অরক্ষিত ইরান

অভিযানটি ছিল অনেক বেশি দুঃসাহসী। ইসরায়েলি কমান্ডোদের একটি টিম ইরানের অত্যন্ত সুরক্ষিত ওয়্যারহাউজে প্রবেশ করেছিল। ভোরের আগেই দলটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথি চুরি করে তারা ইসরায়েলের মাটিতে ফিরে আসে।

কয়েক সপ্তাহ পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই চুরি করা নথির বরাত দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পরিকল্পনা তুলে ধরেন জাতিসংঘে। ওই সময় তিনি ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদেহর নামটিও প্রকাশ করেন।

রাজধানী তেহরানের কাছে শুক্রবার গুপ্ত হামলায় নিহত হন মোহসিন ফখরিজাদেহ। মোহসিন শুধু পরমাণু বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তাকে ইরানের বোমার জনক বলতেন কূটনীতিকরা। বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি দিয়ে তেহরানের বাইরে কৌশলে থামানো হয় মোহসিনের গাড়িটি। এরপর দ্রুত আরেকটি গাড়ি থেকে এক দল বন্দুকধারী বের হয়ে দ্রুত গুলি ছুড়ে ইরানি বিজ্ঞানীর মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং পালিয়ে যায়।

ইরানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এভাবে শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার ঘটনায় এটাই প্রমাণ করছে ইসরায়েলিদের কাছে তেহরান এখনও কতোটা অরক্ষিত। 

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক প্রধান ব্রুস রিডেল বলেন, ‘এটা নজিরবিহীন। এটি ইরানিদের কার্যকর প্রতিরোধের কোনো চিহ্নও দেখাচ্ছে না।’

ইরান অবশ্য গত চার বছর ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ  চাপের মুখে রয়েছে। মার্কিন নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলের ঘোষণা আসায় অনেক ইরানি নেতা এখন হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছেন। বাইডেন ইতোমধ্যে ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মোহসিন হত্যার বদলার ঘোষণা দিলেও তা ‘যথাসময়ে’ নেওয়ার কথা বলেছে ইরান।

বাস্তবাদী অনেক ইরানি নেতার মতে, ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ দিনগুলোতে তেহরানের ওপর একের পর এক হামলা চালাতে পারে। এই সময় ইরান পাল্টা ব্যবস্থা নিলে ট্রাম্প প্রশাসন এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে যা তাদের অর্থনীতিকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।

ইরানের সাংস্কৃতিক ও পরিচালনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেইন খোশবাগত টুইটারে লিখেছেন, ‘আজ থেকে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগ পর্যন্ত ইরানের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।’

সিআইএ’র সাবেক প্রধান ব্রুস রিডেল বলেন, ইসরায়েল এককভাবে ইরানের বিরুদ্ধে সফল একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এর জন্য তার গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সম্পদ কাজে লাগাচ্ছে। ইরানের ওপর নজরদারি বাড়াতে সতর্কভাবে এর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে। আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে দেশটিতে ড্রোনসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। সম্প্রতি আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে সেসব অস্ত্র নজরে এসেছে। এসব ড্রোন বা অন্যান্য যন্ত্রের মাধ্যমে তেহরানের ওপর নজরদারি বাড়াতে পারে ইহুদি রাষ্ট্রটি।

 রিডেল জানান, মোহসিন ফখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডে এটাই ইঙ্গিত মিলছে যে, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল একের পর এক ইরানি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের ওপর যে হামলা শুরু করেছিল ১০ বছর পর আবারও তা শুরু হলো। এখন দেখার বিষয়, ইসরায়েল কি খেলা শুরু করলো নাকি শুরুর পথে রয়েছে।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়