ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মা হতে চাওয়া ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য ইসরায়েলের কারগার থেকে বীর্য পাচার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
মা হতে চাওয়া ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য ইসরায়েলের কারগার থেকে বীর্য পাচার

বন্দিদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদে উস্কানির সরঞ্জাম সরবরাহ হতে পারে দাবি করে কারাগারে ফিলিস্তিনি দম্পতিদের একান্ত সাক্ষাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, যাবজ্জবীন মেয়াদে কিংবা দীর্ঘসময়ে কারাগারে থাকা পুরুষ বন্দিদের স্ত্রীরা মা হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নতুন বিয়ে হয়েছে এমন দম্পতিদের বেলায় এটা অনেক বেশি কষ্টের। তাই মা হওয়ার জন্য এসব বন্দিদের স্ত্রীরা নতুন পথ বেছে নিয়েছেন।

ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর তিরার বাসিন্দা হচ্ছেন সানা সালামা। এই ইসরায়েলি- আরব নারী চলতি বছর মা হয়েছেন। তবে তার মা হওয়ার পথযাত্রাটি ছিলো অনেক বেশি দুঃসাহসিক। এর কারণ হচ্ছে, তার স্বামী ওয়ালিদ দাক্কা সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাবাসের দণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন।

ইসরায়েলি সেনা সদস্য মোসেহ তামামকে হত্যার অভিযোগে ১৯৮৬ সালে আটক করা হয় ওয়ালিদকে। এর ১৩ বছর পর ফিলিস্তিনি বন্দিদের নিয়ে একটি বই লেখার কাজ করছিলেন সানা সালামা। তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে কারাগারেই প্রেম হয় ওয়ালিদ ও সানার। পরে তারা বিয়ে করেন। তবে বিয়ে হলেও তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক মেলামেশা হয়নি। অথচ মনেপ্রাণে মা হতে চাইছিলেন সানা।

সানা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৯ সালে বিয়ে করি এবং আমি সত্যিকারার্থে তার কাছ থেকে একটি সন্তান চাইছিলাম।’

তবে সমস্যা হচ্ছে, নব দম্পতির বিশেষ সাক্ষাতের অনুমোদন দেয় না ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্তদের বেলায় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কঠোর। তাদের মতে, এর মাধ্যমে বন্দিরা কারাগারে অস্ত্র, অর্থ এমনকি মাদক পাচার করতে পারে।

মা হতে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনি বন্দিদের স্ত্রীদের মধ্যে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে, চোরাই বীর্য। অর্থাৎ কারাগারে থাকা তাদের স্বামীদের বীর্য চোরাই পথে সংগ্রহ করে পরে তা হাসপাতালের মাধ্যমে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।   

সানা বলেন, ‘আমার স্বামীকে যখন বললাম আমি মা হতে প্রস্তুত, তখন সে বিস্মিত হয়েছিল। আমি তাকে বিষয়টি বলতে ইতস্তত করিনি এবং তাকে জানিয়েছিলাম যে, আমি এটি আনন্দের সঙ্গে করব।’

রক্ষণশীল ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য এই পদ্ধতি মেনে নেওয়া বেশ কষ্টকর। তাই সানাকে প্রথম বেশ ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পরে অবশ্য তার পরিবার এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জুগিয়েছে।

কারাগার থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে তার স্বামীর বীর্য পাচার হয়ে এসেছিল তা জানা হয়নি সানার। এমনকি তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোন মানুষগুলো জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে কাজটি করেছিলেন তাদেরকেও চেনেনা তিনি। ১৩ সপ্তাহ পর নাজারেত ফার্টিলিটি ক্লিনিকের চিকিৎসকরা সানাকে জানান, তিনি সন্তানসম্ভবা। গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্যবান এক মেয়েশিশুর জন্ম দিয়েছেন তিনি। সানা এই শিশুর নাম রেখেছে মিলাদ।

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি পুরুষদের স্ত্রীদের এভাবে মা হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১২ সালে ৭০ জনেরও বেশি নারী সন্তানের আকাঙ্খায় এই পথে হেঁটেছিলেন। ২০১৮ সালে কারাগারে বন্দি বাবাদের ৬০টির বেশি সন্তান জন্ম নিয়েছে।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়