‘কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তাম, ওষুধ নেওয়া বাড়িয়ে দিলাম’
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে ফারহান তৌহিদ ও তার ভাই ফারবিন তৌহিদ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছেন। তারাও বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন ওই দুই সহোদর। হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। বিষণ্নতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই নোটে ফুটে উঠেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য সেই ‘সুইসাইড নোট’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।বিশাল সেই নোটের দ্বিতীয় পর্ব এখানে।
(ফারহানের নোটের শিরোনাম ছিল—পরিবারের সবাইকে হত্যার পর আমি আত্মহত্যা করলাম)
একদিন আমি বাবাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করলেন। শেষ পর্যন্ত আমাকে কিশোর মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেখে আসা হলো। আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো এবং ওষুধ দেওয়া হলো (এগুলো বেশ সাহায্যকারী বলে মনে হলো)। তারা আমাকে অবসাদ এড়ানোর কিছু কৌশলও বলে দিলো। এগুলোর মধ্যে ছিল, ডায়েরি লেখা এবং থেরাপি ছাড়া অন্যকিছু।
জুনিয়র বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে (আপনারা যেমনটা জানেন) বড় পরিবর্তন আসলো, আমি বেশ স্মার্ট হয়ে গেলাম। গ্রীষ্মকাল যখন আসি আসি করছিল, তখন আমার ওজন অনেক কমে গেলো এবং ছোট বাচ্চা হিসেবে যে কাজগুলো অস্বস্তিকর ছিলো সেগুলো বন্ধ করে দিলাম।
গ্রীষ্মের শেষ দিকে আমি সিনিয়র বর্ষে উত্তীর্ণ হলাম। যেটি ছিল আমার জীবনের সেরা বছর। আমি কোনোভাবে একজন বান্ধবী জোগাড় করে ফেললাম, যে ছিল আমার সম্প্রদায়ের অনেক দূরের, সে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার ঈশ্বরে পরিণত হলো এবং সত্যিকারের বন্ধুদের একটি গ্রুপ তৈরি করলো। আমি যখন ইউটি অস্টিনে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হলাম তখন পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করলো। যেটি অনেক বড় পাওনা। আমি কখনোই স্কুলের তোয়াক্কা করতাম না। কিন্তু অন্যরা আমাকে নিয়ে ভাবছে ভাবতে ভালো লাগছিল। আমার জীবন পুরোপুরি ঠিক হওয়া পথে ছিল, তাই না?
দুর্ভাগ্যবশত জবাবটা হচ্ছে, হ্যাঁ। আমার জীবন ছিল যথার্থ। এটাই ছিল ইস্যু। আমার জীবন যথার্থ ছিল কিন্তু আমি যে বিষণ্ন ছিলাম তার কোনো পরিবর্তন হলো না। আমার তখনও নিজের দেহ কাটতে ইচ্ছা করতো কিংবা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তাম। আমি ওষুধ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম এবং এটা কাজও করতো। তবে এটা ছিল সাময়িক। প্রত্যেকটি সমাধান ছিল সাময়িক।
কলেজের দিকে এগুলাম। আমার তিন সেরা বন্ধুর সঙ্গে গেলাম। কলেজে যাওয়াটা ছিল নতুন করে শুরু করা, যেখানে আমি নতুন চেষ্টা শুরু করতে পারতাম, ভালো গ্রেড পেতে পারতাম এবং আশা করা যেতো স্বাভাবিক হওয়ার। আমি এটা করতে পারিনি। শপথ, আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি পারিনি।
পড়ুন: সুইসাইড নোট (১)
ঢাকা/শাহেদ
আরো পড়ুন