ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে জাগানোর দরকার ছিল, কিন্তু...’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২৩:২০, ৭ এপ্রিল ২০২১
‘আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে জাগানোর দরকার ছিল, কিন্তু...’

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে ফারহান তৌহিদ ও তার ভাই ফারবিন তৌহিদ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছেন। তারাও বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন ওই দুই সহোদর। হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। বিষণ্নতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই নোটে ফুটে উঠেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য সেই ‘সুইসাইড নোট’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।বিশাল সেই নোটের চতুর্থ পর্ব এখানে।

(ফারহানের নোটের শিরোনাম ছিল—পরিবারের সবাইকে হত্যার পর আমি আত্মহত্যা করলাম)

আমি কষ্ট পাওয়া ঠেকাতে চেয়েছি মানুষ সেই দাবি করার আগেই বলছি, বিষয়টি পুরোপুরি এমন নয়। অবশ্যই কুইজের কথা ভুলে যাওয়ার বা সাক্ষাত্কার না দেওয়ার পরে মানুষের বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কষ্ট বোঝা যায়। আমার সমস্যাটা হচ্ছে, অনেক মানুষ কষ্ট অনুভব করলেও আমার কাছে এটা হতাশা বলে মনে হয় না। হতাশা হচ্ছে, আপনি যখন একই কষ্ট অনুভব করেন সেই বিন্দুতে যেখানে এটি আপনার ঘুমকে বাধা দেয় বা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আপনার শখের জিনিসগুলো করতে বাধা দেয়। এটি একটি সত্যিকারের অসুস্থতা।  যদি কাউকে রসিকতা করেও অদ্ভূতুরে বলাকে ভুল বলা হয় তাহলে এটিও একইভাবে বিষণ্নতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

শারীরিক অসুস্থতা থেকে কেন মানসিক অসুস্থতার এতোটা পার্থক্য করা হয় তা আমি বুঝি না। পা ছাড়া কেউ হাঁটবে এটি যেমন কেউ প্রত্যাশা করে না, তাই বিষন্ন ব্যক্তির পক্ষে স্বাভাবিক থাকতে যে খুব কষ্ট হয় তা অবাক হওয়ার মতো বিষয় হওয়া উচিত নয়। আমি মনে করি এটি মস্তিষ্কের গঠন থেকে পৃথক একটি চেতনার ধারণায় উদ্ভূত। তবে কেউ যদি আপনার মস্তিষ্কের একটি মৌলিক অংশ বের করে নেয় তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,আমার মাথার উপরের অংশে মৃগী রোগীদের মতো লক্ষণ থাকতে পারে।  একবার সেখান থেকে অ্যামিগডালাগুলি ( মস্তিস্কের যে অংশে ভয়, আতঙ্ক, আনন্দ, দুঃখ, হতাশা- এমন নানা অনুভূতির জন্ম হয়) অপসারণ করা হলে সেই মৃগী রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। তবে এর ফলে ব্যক্তি আরও বেপরোয়া আচরণ করবে, যেমনটা  বলা যায় প্রাকৃতিকগত ভাবে ভয়ের যে প্রতিক্রিয়া তার আর থাকবে না। আমি নিশ্চিত এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। নিউরনগুলি স্রেফ কম্পিউটারে ট্রানজিস্টরের জৈবিক রূপের মতো;  শূন্য এস এবং ওয়ান এসের পরিবর্তে এটিসিজি (এটি ডিএনএ তবে আপনি পয়েন্টটি ধরতে পেরেছেন)। সচেতনতা দৈব বিবর্তনের উপজাত ছাড়া কিছুই নয়।

শীতকালীন ছুটি চলে এসেছিল। আমি প্রোগ্রামিং নিয়ে পুনরায় পড়াশোনা শুরুর চেষ্টা করি। আমি আমার ভাইয়ের সাথে একটি থ্রিডি গ্রাফিক্স ইঞ্জিন তৈরি করেছিলাম। এটি ছিল বেশ মজার (github.com/FarTow এ দেখুন)। আমি স্কুলে আবারও যেতে তৈরি ছিলাম। আমার কি আসলেই কোনো পছন্দের সুযোগ ছিল?

এটা হয়ে ওঠেনি। আমি পাত্তা দেই না।
আমি একসঙ্গে থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তবে আমার ঘনিষ্ঠ রুমমেট লক্ষ্য করেছিল যে আমি একেবারেই নীরব হয়ে গেছি। সে আমাকে আলোচনার প্রস্তাব দিলো। এটা গ্রহণ করাটাই ছিল আমার ভুল।

আমি তাকে সবকিছু বললাম। ইতোমধ্যে সে আমার বেশিরভাগ মতাদর্শ জেনে গিয়েছে। তবে তার সঙ্গে একটি নতুন ভাবনা আলোচনা করেছিলাম, যেটি তাকে তাড়া করতে শুরু করে। ভয় পাবেন না। আমি এর কিছুটা প্রকাশ করবো। 

আপনি শুধু জেনে নিন যে, আলাপের কয়েক সপ্তাহ পরে আমাকে ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি তাদের সত্যিই দোষ দিতে পারি না, তবে আমি আশা করি তারা কমপক্ষে আমার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তটি নিতে পারতো।

বের করে দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে আমি কলেজ থেকে ঝরে পড়ি ; কিছু কাগজের জন্য অনুপ্রেরণা পাওয়ার আগে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে জাগানোর দরকার ছিল।

পড়ুন:  সুইসাইড নোট (৩)

           সুইসাইড নোট (২)

           সুইসাইড নোট (১)           

       

ঢাকা/শাহেদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়