ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আফগানিস্তান এখন কান্না ও কফিনের দেশ

সারা সাজ্জাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ১৬ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৫:২০, ১৬ অক্টোবর ২০২১
আফগানিস্তান এখন কান্না ও কফিনের দেশ

তালেবানের নৃশংসতায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেককে

দৃশ্যটা মর্মান্তিক! কাঠের কফিন উঠানে রাখা। একটু পরে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কবরস্থানে। সেই কফিন জড়িয়ে দুই অবোধ শিশু কেঁদেই চলেছে। একদিন আগেও যে মানুষটি আদর ভালোবাসায় তার শিশুদের জড়িয়ে রাখতেন সেই তিনি আজ মৃত। তালেবান নৃশংসতার শিকার! তার শিশুরা এতিম, অসহায় হয়ে গেল ক্ষোভ, ক্ষমতা, হিংসা আর উন্মত্ততার আগুনে পুড়ে।

এমন অসহায় দৃশ্য এখন তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের প্রায় নিত্যদিনের চিত্র। শব্দের অক্ষরে এই করুণ দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। এ যেন ধারালো ছুরির ফলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়া বুক। প্রিয়জনের কফিন জড়িয়ে এই কান্না, সাধারণ মানুষের এই অসহায়ত্ব এখন আফগানিস্তানের নতুন মানচিত্র যেন!

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল কায়েদার হামলার পর সারা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে আফগানিস্তানের তালেবান। আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে জোর করে সরানো হয়েছিল ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত এক যুদ্ধের মাধ্যমে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়, তার শর্ত ছিলো যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং তালেবানও আর মার্কিন বাহিনীর ওপর কোনো হামলা চালাবে না। চুক্তির আরও শর্তের মধ্যে ছিলো তালেবান আর আল কায়েদা কিংবা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আশ্রয় দেবে না এবং আফগান শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাবে। কিন্তু এই চুক্তির পরবর্তী দিনগুলোতেও তালেবান আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রেখেছে। আর এখন যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকেই শুরু হয় নৃশংসতা।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে ২০২১ সালের ১ মে শুরু হওয়া আফগানিস্তান সরকার ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে তালেবান ও আল কায়েদাসহ তাদের মিত্র সামরিক গোষ্ঠীগুলোর একটি চলমান আক্রমণ। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে তালেবান গ্রামাঞ্চলের দিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অগ্রসর হয়। ওই মাসে তালেবানের সঙ্গে সংঘাতে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ৪০৫ জন এবং ২৬০ জন বেসামারিক নাগরিক নিহত হন। অন্যদিকে, আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২ হাজার ১৪৬ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করে। একই মাসে তালেবানের সঙ্গে সংঘাতে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০৫ জন এবং ২৬০ জন বেসামারিক নাগরিক নিহত হন।

৩ আগস্ট কাবুলে তালেবানের গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ফলে ৫ তালেবান যোদ্ধাসহ ১৩ জন নিহত হন। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। যদিও তিনি এই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

৫ আগস্ট পর্যন্ত তালেবানের সঙ্গে সংঘাতে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১৫ জন সদস্য ও ৫৮ জন বেসামরিক নাগিরক নিহত হন।

২০২১ সালের ২৬ আগস্ট বিকেলে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও আফগান জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ার সময় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় কমপক্ষে ১৮৫ জন নিহত হন। যার মধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ১৩ জন সদস্য ছিলেন।  যা ছিলো ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর আফগানিস্তানে প্রথম মার্কিন সামরিক হতাহতের ঘটনা। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট – খোরাসান প্রদেশ এই হামলা চালায়, যারা এক বিবৃতিতে এটির দায় স্বীকার করে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বার এক মসজিদে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দুই শতাধিকের বেশি।

বহু আফগান আশা করেছিলেন, তালেবান ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এলেও একটা অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সিকান্দার কিরমানি জানাচ্ছেন তালেবান নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, আইএস তাতে বড়ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।

ঢাকা/ইভা ​​​​​​​

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়