ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে কারণে উত্তর প্রদেশে বেড়েছে গরুর হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৫ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২০:৫৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২২
যে কারণে উত্তর প্রদেশে বেড়েছে গরুর হামলা

ভারতের উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ৫৫ বছরের রাম রাজ গত বছরের নভেম্বরের এক সকালে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে চা পান করছিলেন। কয়েক মিনিট পর দাদার অবস্থা দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে রাম রাজের নাতি। একটি দলছুট গরু হঠাৎ করে হামলা চালিয়েছে তার ওপর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে গুরুতর আহত রাম রাজ মারা যায়।

২০২০ সালে করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন ৩৬ বছরের ভুপেন্দর দুবে। ওই বছর বাজারে গরুর হামলার শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়। ভুপেন্দরের বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বসবাস রাম কালির। গরুর হামলার শিকার হয়ে ২০১৯ সাল থেকে তিনি কোমায় রয়েছেন।

জনবহুল উত্তর প্রদেশে গরুর হামলা এখন সাধারণ ব্যাপার। রাজ্যটিতে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর ফলে এখানে গরুর সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। রাজ্যটিতে ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনে এই গরুই হয়ে উঠেছে একটি বড় ইস্যু। 

চরম হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ভারতে সরকারিভাবে গরু জবাইয়ের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দেশটির ১৮টি রাজ্যে গরু জবাইকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে উত্তর প্রদেশও রয়েছে। ২০১৭ সালে যোগি আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর প্রদেশের অনেকগুলো কসাইখানা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এই রাজ্যটি একসময় ছিল অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গোমাংস রপ্তানিকারক। রাজ্যটির অধিকাংশ গরুর ব্যবসায়ী হয় মুসলিম না হয় দলিত হিন্দু। বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা অহরহ এই গরু ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, এমনকি অনেককে পিটিয়ে কিংবা কুপিয়ে হত্যা করেছে। তাই বাধ্য হয়ে এরা গরুর ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্রি করতে না পারায় কৃষকদের গোয়ালে গরুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

শিব পুজন নামে এক কৃষক বলেন, ‘দুধ দেওয়া বন্ধ করলে কিংবা চাষাবাদের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়লে আমরা গরু বিক্রি করে দিতাম। এখন কোনো ক্রেতা নেই, তাই কেউ আর বিক্রি করতে পারছে না।’

উত্তর প্রদেশের শহর ও গ্রামগুলোতে এখন বিপুল সংখ্যক দলছুট গরু দেখা যায়। সরকারি খোঁয়াড়ে জায়গা না পাওয়া এই গরুগুলো কখনো কখনো কারো ফসলের জমিতে ঢুকে পড়ছে। খাদ্য না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসব গরু কখনো মানুষ, বাড়ি-ঘর ও যানবাহনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে ঘটছে হতাহতের মতো ঘটনা। অনেক এলাকায় কৃষককে এই শীতের মধ্যে রাত জেগে ফসল পাহারা দিতে হচ্ছে। আর ফসল পাহারা দিতে গিয়ে অনেকে সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন।

একটি সরকারি খোঁয়াড়ের দায়িত্বে থাকা শত্রুঘ্ন তিওয়ারি বলেন, ‘এখানে ২০০ গরু রয়েছে, যা ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ। এই এলাকায় এখনও ৭০০ থেকে এক হাজার দলছুট গরু রয়েছে।’

এবারের নির্বাচনে এই গরু একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর প্রদেশের গ্রাম ও মফস্বল এলাকাগুলোতে এই গরু ইস্যুটিকে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারণা অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে বিরোধী দলগুলো। ভোটারদের অনেকেই বিরক্ত হয়ে ভোট বর্জনের কথাও জানিয়েছেন।

দিনা নাথ নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের সমস্যার যদি সমাধানই না হয় তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কী?’
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়