ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘তার মতো দেখতে হওয়া অনেক বড় পাওয়া’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘তার মতো দেখতে হওয়া অনেক বড় পাওয়া’

এসকে রেজা পারভেজ : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা স্বচক্ষে দেখেছেন, তারা কতটা সৌভাগ্যবান সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৫ আগস্টের ঘটনা না ঘটলে হয়তো তাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হতো বর্তমান প্রজন্মের। তবে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে স্বচক্ষে দেখার ব্যাকুলতা যে কি, তা অনুভব করতে পারছেন একজন আরুক মুন্সী।

বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে এই মানুষটিকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসছেন তার কাছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ আরুক মুন্সী এখন তারকা বটে! সময়-অসময় নেই যখন-তখন পড়ছেন সেলফি শিকারিদের কবলে। অনেকে বাসায় দাওয়াত দিচ্ছেন, রেস্টেুরেন্টে আমন্ত্রন জানাচ্ছে, উপহার সামগ্রী দিচ্ছেন। সারাদেশের মানুষের কৌতুহলকে বিবেচনায় নিয়ে পাঠকদের জন্য রাইজিংবিডি জেনেছে কে এই আরুক মুন্সী।

বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে এই মানুষটির অগাধ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। তিনি নিজে মনে করেন না যে, তাকে দেখতে বঙ্গবন্ধুর মতো লাগে। তবে মানুষ যখন তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায় তখন তিনি বেশ গর্ববোধ করেন।

‘মানুষ যখন আমাকে বঙ্গবন্ধুর মতো বলে আমার বুক গর্বে ভরে যায়। যে মানুষটির জন্ম না হলে আমার দেশ স্বাধীন হতো না, বাংলায় তার মতো নেতা আর কখনো জন্ম নেবে না; তার মতো দেখতে হওয়াটাও অনেক বড় পাওয়া। মানুষ যেভাবে আমাকে দেখতে আসে, অনুভুতি ব্যক্ত করে তখন বুঝি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের কি ভালোবাসা। একজন মানুষ তার মতো দেখতে তাই তারা একনজর দেখতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসে, ভালোবাসা দেখায়। আমি গর্বিত বঙ্গবন্ধুর জন্য।’  

আরুক মুন্সী ১৯৬৯ সালের ৬ জুলাই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কামারোল গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে অনেক বছর আগে গোপালগঞ্জের পার্শবর্তী জেলা নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের চর সুচাইল গ্রামে বাড়ি করে সেখানে থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে স্ত্রী, দুই মেয়ে, ১ ছেলে ও মাকে নিয়ে থাকেন ঢাকার হাতিরপুল পাওয়ার হাউস এলাকায়। ১৯৯৩ সাল থেকে গাড়ি চালক পদে চাকরি করেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি)। আরুক মুন্সী বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একদিন তার বাবার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করবেন।

বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে বিষয়টি কীভাবে উপভোগ করেন জানতে চাইলে আরুক মুন্সী বলেন, ‘আমার কাছে কখনো মনে হয় না আমি ওনার মতো দেখতে। বঙ্গবন্ধু তো বঙ্গবন্ধুই, তার বিকল্প এই দেশে আর কখনো জন্মাবে না, তার চেহারার মতোও না। যে যাই বলুক একজনের চেহারার সঙ্গে আরেক জনের মিল থাকতেই পারে। তবে আমি মনে করি না যে, আমার চেহারা বঙ্গবন্ধুর মতো। তবে মানুষ বলেন এবং সাংবাদিকরা বলেন যে, আমায় দেখতে ওনার মতো লাগে। সেই হিসেবে আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানাই। জাতির জনকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

হয়তো বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে না হলে আমার মতো সামান্য কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিতে কখনো আসতেন না। বঙ্গবন্ধু যদি এই দেশে না জন্ম নিতেন এই দেশ স্বাধীন হতো না। তিনি এই দেশ সোনার বাংলা গড়তে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, হয়তো উনি বেঁচে থাকলে এই দেশ সোনার বাংলায় পরিণত হতো। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পারবেন।

আরুক মুন্সী

বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে হওয়ায় বলা হচ্ছে আপনি তারকা হয়ে গেছেন, বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

আরুক মুন্সী : বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে হওয়ার কারণেই অনেকে দেখা করতে আসেন, আমার সঙ্গে ছবি তোলেন। আমি মনে করি এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে তারা বারবার স্মরণ করেন। বর্তমান প্রজন্মের যারা আছে তারা তো বঙ্গবন্ধুকে দেখেন নি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুকে না দেখতে পাওয়ার যে হাহাকার, ব্যাকুলতা, সেটি হয়তো আমার চেহারার মধ্যে খুঁজে ফেরেন।

আপনি বঙ্গবন্ধুর মতো মুজিব কোট পোশাক, ওনার মতো পাঞ্জাবি পড়েন। সবসময়ই এমন পোশাক পড়েন?

আরুক মুন্সী : এই মুজিব কোট বা পাঞ্জাবি; এগুলো অফিস টাইমে পরি না। এসব আগে পড়তাম না, ইদানিং পড়ি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা নিজেকে টিভি পর্দায় আনার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার কখনো টিভিতে আসার ইচ্ছে ছিলো না। যদি দেখি ক্যামেরা আমার দিকে আসছে আমি ঘুরে দাঁড়াই যাতে ক্যামেরায় না আসি।

সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন কি ? 

আরুক মুন্সী : আমার রক্ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, যদিও আন লিস্টেড। কারণ, যখন তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন তখন তার নাম মুক্তিযোদ্ধার লিস্টে উঠাতে হবে সেই চিন্তা করে যুদ্ধে যাননি। দেশের টানে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ যেখানে আছে আমি সেখানে আছি।

এই যে এতো এতো লোক দেখতে আসেন, মিডিয়া সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, মানুষ ছবি তুলছে; এগুলো নিয়ে কি গর্ববোধ করেন?

আরুক মুন্সী : আবার বলছি, আমি হাজার কোটি শুকরিয়া আদায় করি যে বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে লাগে আমাকে। এটি নিয়ে আমি শুধু গর্ববোধ করি না, একজীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়াও। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন মানুষ আমাকে একনজর দেখতে আসে। আসলে আমি স্বচ্ছল লোক নই। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আমি কাজ করি। এখানে যদি এদিক-সেদিক করা যায় টাকা আছে। কিন্তু অনেকে বলেন, ওই লোকটাকে জাতির জনকের মতো দেখতে, তখন আমার কোনো অন্যায় কাজ দেখলে বিবেকে বাধা দেয়। তাছাড়া আমার বাবার নির্দেশ কাউকে পারলে উপকার করবা, ক্ষতি করবা না। কোনো অন্যায় করা যাবে না। আমি চেষ্টা করি মানুষকে যতদুর সম্ভব সহায়তা করি। অন্যায় অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকি।   

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কতটুকু ধারন করেন?

আরুক মুন্সী : ক্ষুদ্র মানুষ হিসেবে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নীতি শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করি।

আপনার প্রতি মানুষের এই যে ভালোবাসা কখনো ভেবেছিলেন এমন হবে?

আরুক মুন্সী : না আসলে কখনো ভাবিনি সামান্য কর্মচারী আমি, এতো ভালোবাসা সম্মান পাবো। মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আবার অনেকে গিফটও করে। এই সেদিন একজন মালয়েশিয়া থেকে আমাকে একটা মোবাইল ফোন দিয়েছে। আমার চশমা আছে এরপরও আরেকজন একটা চশমা দিয়েছে। এসব ভালোবাসা। সেদিন রিকশা থেকে নেমে ইডেন মহিলা কলেজের একজন নেত্রী এসেই পায়ে সালাম দিয়ে পরিচয় দিয়ে বললো আমি আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলতে চাই। আমি বললাম ঠিক আছে। শুধু সারাদেশ থেকে এভাবে দেখা করতে আসে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে মানুষ আসেন শুধু আমার সঙ্গে দেখা করতে, ভাবা যায় বলুন! আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। আমি বলি ভাই আপনি এতোদূর থেকে আসবেন আসলে আমার তো থাকতে দেয়ার জায়গা নাই। তারা বলে আমরা শুধু আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো এতোদূর থেকে আসবে না কিন্তু এসেছে। প্রতিদিনিই এভাবে দূর-দূরান্ত থেকে তারা এসেছেন শুধু দেখা করার জন্য।  

মানুষের এই ভালোবাসা পাচ্ছেন সেটা নিয়ে আপনার অনুভতি কি ?

আরুক মুন্সী : এই ভালোবাসার মূল্যায়ন কীভাবে দেবো আমি বুঝতে পারি না।  তবে একটা জিনিস, বঙ্গবন্ধুকে যে মানুষ কতটা ভালোবাসে তাকে একনজর দেখতে পাওয়ার যে ব্যাকুলতা সেটি আমি টের পাই। উনার মতো দেখতে হওয়ায় আমাকে শুধু একবার দেখার জন্য কতো মানুষ কত দূর থেকে ছুটে আসছেন। উনার মতো দেখতে হওয়ার সুবাদে মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

রাইজিংবিডির চিফ রিপোর্টার রেজা পারভেজ ও আরুক মুন্সী

 

বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে হওয়ার কারণে কোনো বিশেষ ঘটনা আছে?

আরুক মুন্সী : একজনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। তিনি ফেসবুকে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করেন প্রথমে। আমি তাকে বলি আমি তোমাকে তুমি বলি আর তুমি আমাকে ভাই বলবা। স্যার কেন বলবা। তিনি পুঁথি আর সুতা কিনে নিজেই একটা টিস্যু পেপারের বক্স বানিয়ে নিয়ে এসেছে। সকালে ফকিরাপুল নেমে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কোথায় আসবেন। আমি তাকে সেভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। তাকে এগিয়ে আনার জন্য আমি রাস্তায় আসি। মাঝপথে আমাকে দেখেই হুট করে তিনি পায়ের কাছে নুয়ে পড়েন সালাম করার জন্য। আমি তাকে ধরে উঠিয়েছি। ওই সময়ে আমার বুকের মধ্যে হু হু করে কেঁদে ওঠে। ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিলো আমি তো এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

আরেকবার আমি ঈদের পর বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়েছিলাম উনার কবর জিয়ারত করতে। জিয়ারত শেষে আমি আমাদের এক বাজারে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় ঢাকা গাজীপুর থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যাওয়া কয়েকজন খুঁজছিলেন আমাকে। আমাকে হঠাৎ করে দেখে একজন দৌড়ে এগিয়ে আসেন। আমাকে দেখার পর তার কোনো হুশ-ই ছিলো না। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য এতোটাই উদগ্রীব ছিলেন যে, হাইওয়ের মধ্যেও আড়াআড়ি দৌড়ে এসেছেন। হাইওয়েতে সাই সাই করে গাড়ি চলছে, তার কোনো খেয়াল-ই নেই। ভাগ্য ভালো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমি এই দৃশ্য দেখে চোখে পানি আটকে রাখতে পারলাম না। ভাবলাম বঙ্গবন্ধুকে মানুষ কতটা ভালোবাসে। আমি যখন তাকে জিজ্ঞসা করলাম এভাবে পাগলামি কেন করলেন, তিনি বললেন, ‘আমি আপনাকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি।’  

আপনি বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে, কখনো কি ইচ্ছে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার সামনে থেকে দেখতে, উনার সঙ্গে কথা বলতে?

আরুক মুন্সী : চাই তো অবশ্যই। যদি কখনো এমন হয় আমার জীবনে আর কিছু বাকি থাকবে না। একজীবনে আর কিছু পাওয়ারও থাকবে না। নি:সন্দেহে সেই দিন আমার জীভনের সেরা দিন হবে। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগ করি, যদি কখনো নেত্রী সাক্ষাৎ দেন আমি কৃতজ্ঞ হবো। যদি না দেন তাতেও কোনো অসুবিধা নেই, দু:খ থাকবে না। কারণ, আমার নেত্রীর কি এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় আছে, তিনি দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন, বিশ্বকে নিয়ে ভাবেন। একজন সাধারণ মানুষ আট নয় ঘন্টা ঘুমান আমার নেত্রী চার-পাচ ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজ করতে ব্যস্ত থাকেন তিনি। আমি দোয়া করি তার জন্য, তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন, কাজ করার সুযোগ পান, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অবশ্যই তিনি গড়বেন, এটাই আমার বিশ্বাস।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৯/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়