ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছি’

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ শিক্ষার্থী নাসির আবদুল্লাহ। ২৮ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছেন। কেন তিনি সেখানে এতদিন ধরে অবস্থান করছেন, কী তার দাবি- এসব বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কথোপকথনে ছিলেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আবু বকর ইয়ামিন।

রাইজিংবিডি: আপনি কবে থেকে এখানে অবস্থান করছেন?

নাসির আব্দুল্লাহ: জানুয়ারির ২৫ তারিখ বিকেল সাড়ে চারটা থেকে এখানে অবস্থান করছি। সব মিলিয়ে গত ২৮ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান করছি।

রাইজিংবিডি: আপনার দাবি কী?

নাসির আব্দুল্লাহ: আমার এখানে অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান। এই দুই দাবিতে এখানে অবস্থান করছি। দাবি যতদিন আদায় হবে না, আমি এখানে অবস্থান করবো।

রাইজিংবিডি: এখন পর্যন্ত কারো পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পেয়েছেন, কেউ কী আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে?

নাসির আব্দুল্লাহ: না। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ডিপার্টমেন্ট, হল প্রশাসনের কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেননি।

রাইজিংবিডি: বন্ধুরা যোগাযোগ করেছে?

নাসির আব্দুল্লাহ: বন্ধুরা অধিকাংশই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কারণ সবার মাঝে একটা ভীতি কাজ করছে। যে কারণে তারা আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করছেন না।

রাইজিংবিডি: ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কেউ কী আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে?

নাসির আব্দুল্লাহ: ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। যেমন- বাম ছাত্র সংগঠনগুলো, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য মঞ্চসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বরাবরই আমার সাথে সংহতি প্রকাশ করে আসছে।

রাইজিংবিডি: বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কেউ কী যোগাযোগ করেছেন?

নাসির আব্দুল্লাহ: অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ‍রুশাদ ফরিদি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া জোনায়েদ সাকী, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ অনেকে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

রাইজিংবিডি: বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে পরীক্ষার অনুমতি পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনার কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করেন কী?

নাসির আব্দুল্লাহ: অবশ্যই সমস্যা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করা। কাউকে না কাউকে অবশ্যই এর প্রতিবাদ করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি এই প্রতিবাদ করছি। ক্লাসে উপস্থিত সমস্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারব কিনা, ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব কিনা সেটা নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।

রাইজিংবিডি: আপনার পরিবারের ভাবনা কী?

নাসির আব্দুল্লাহ: আমার বাবা এবং মা দুজনে চান আমি চাকরি করি। পড়াশোনা শেষে ভালো কিছু একটা করি। কিন্তু আমি দেখছি এই যে সীমান্ত হত্যা হচ্ছে সেটা নিয়ে কারো কোনো প্রতিবাদ নেই। তাই আমি বাধ্য হয়েই প্রতিবাদে নেমেছি। পরিবারকে বলেছি ধৈর্য ধরতে।

রাইজিংবিডি: আপনার সহপাঠী কিংবা বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা চাকরির জন‌্য পড়াশোনা করছে। আর আপনি এখানে অবস্থান করছেন- এ বিষয়ে কিছু বলুন।

নাসির আব্দুল্লাহ: আমার বন্ধুবান্ধব, বড় ভাই, ছোট ভাইরা বিসিএসের জন্য পড়ছেন। ব্যাংকের জন্য পড়াশোনা করছেন। কিন্তু আমি সে সুযোগ পাচ্ছি না। যেখানে আমার ভাই কিংবা বোনকে হত্যা করা হয়, কোনো বিচার হয় না, তখন নিজেকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখতে পারি না। তাই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছি। আমি আহ্বান করব, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই প্রতিবাদে সামিল হতে।

রাইজিংবিডি: কতদিন অবস্থান করতে চান?

নাসির আব্দুল্লাহ: হ্যাঁ। আমি রাজপথের ধুলা বালির মধ্যে থাকব। আমার দাবি থেকে সরব না। যতদিন না দাবি আদায় হচ্ছে। এজন্য যতদিন অপেক্ষা করতে হয় আমি অপেক্ষা করব। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন পর্যায়ে আমার একটাই দাবি, সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আমার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিন।

 

ঢাকা/ইয়ামিন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়