ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণে নজর রেখেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকা দক্ষিণে নজর রেখেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের মেয়াদ ইতোমধ্যেই চার বছর পূর্ণ হয়েছে।  ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের পর ৬ মে শপথ নেন তিনি।  মেয়র নির্বাচনের আগে ও পরে নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  এসব বিষয় নিয়ে তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডির মুখোমুখি হন।  এই সাক্ষাৎকার তিন পর্বে প্রকাশিত হচ্ছে এবং এটি দ্বিতীয় পর্ব।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আসাদ আল মাহমুদ।

রাইজিংবিডি: করপোরেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।  সেক্ষেত্রে উন্নয়ন কাজে সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছেন কতটুকু?

সাঈদ খোকন : অধিক নাগরিক সেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণি সিটি করপোরেশন।  এর দিকে নজর রেখেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।  সরাসরি উন্নয়নের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে শুরু করে প্রতিটি উন্নয়ন কাজের জন্য সার্বিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  আর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি।  এরই মধ্যে আটটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ, ছয়টি সুইপার কলোনি এবং তিনটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মিরনজল্লা সুইপার কলোনিতে একটি মন্দির নির্মাণ এবং পোস্তগোলার শ্মশানঘাটের আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  পাশাপাশি করপোরেশনের রাজস্ব আয় বাড়াতে ঢাকেশ্বরী রোডের পাশের মার্কেট, বঙ্গবাজার, সদরঘাট হকার্স মার্কেট ও সদরঘাট লেডিস মার্কেট নির্মাণকাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

রাইজিংবিডি: নগরে বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা রয়েছে।  এসব সমস্যা সমাধানে আপনার পরিকল্পনা কি?

সাঈদ খোকন: ইতিমধ্যেই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।  নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছেন। এরমধ্যে সিটি করপোরেশন ও সরকারের অর্থে প্রায় ৬শ’ ৭০ কিলোমিটার রাস্তা, ৬শ’ কিলোমিটারের বেশি নর্দমা, ১শ’ ৩৩ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।  নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পদক্ষেপ নিয়েছি।  এছাড়া প্রায় ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তা, ৫শ’ কিলোমিটার নর্দমা এবং ১০০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে।  দয়াগঞ্জে আধুনিক পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস চালু সহ ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলিতে ছয়তলা বিশিষ্ট ৬ টি নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে।  আরও আধুনিক পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাসের কাজও চলমান রয়েছে।

জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯টি পার্কের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল খালেক সরদার পার্কের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।  সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক এবং গুলিস্তান পার্কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।  ১২টি খেলার মাঠের মধ্যে শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।  রসুলবাগ মাঠ এবং জোড়পুকুর খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।  অন্যান্য খেলার মাঠ ও পার্কগুলোর উন্নয়ন কাজ শেষ করে চলতি বছরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।  আধুনিক এসব খেলার মাঠ ও পার্কে ফুল, বিনোদনের রাইড, ওয়াকওয়ে, ব্যায়ামাগার, কফি শপ, গ্যালারি ও নানাবিধ বিনোদন সুবিধা থাকবে।  এসব পার্ক ও খেলার মাঠ চালু হলে এক নতুন দৃষ্টিনন্দন রূপ লাভ করবে ডিএসসিসি।  এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নগর পরিবহনগুলো ৬টি কোম্পানির আওতায় এনে ২২টি রুটে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  ধানমন্ডি নিউমার্কেট-আজিমপুর এবং উত্তরা রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হয়েছে।  নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২৮টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়েছে আরও ২টির নির্মাণ কাজ চলছে।  এসব যাত্রী ছাউনিতে ওয়াই-ফাই সুবিধা এবং টিকিট বিক্রির কাউন্টার অর্ন্তভুক্ত আছে।  নিরাপদে সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে নতুন ৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে ও ৭টি নির্মাণাধীন রয়েছে।  এছাড়া পুরনো ১৬টি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।  সহজেই পৌরকর পরিশোধ করতে ই-রেভিনিউ চালু করা হয়েছে।  এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌরকর পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  বৃদ্ধ মানুষের শেষ জীবনের কথা ভেবে সদরঘাট এলাকায় একটি ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন আধুনিকায়ন করে বৃদ্ধাশ্রম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি সরকারি ও ১৯টি বেসরকারি কাঁচাবাজার ফরমালিনমুক্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নের উন্নয়নে সংস্থাটি ৭শ’ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া এলাকার প্রায় ১শ’ ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা, প্রায় ৯ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে।  এছাড়া প্রায় ৫শ’ ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের জন্য রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত, আরসিসি ব্রিজ, অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে।  এর মাধ্যমে নবসংযুক্ত ৮টি ইউনিয়ন করপোরেশনের উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত হয়েছে।

রাইজিংবিডি: যানজট নিরসনে পরিকল্পনা কী?

সাঈদ খোকন : যানজট নিরসনে আমি প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারি মাত্র।  আমি ডিএমপি কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনারা উদ্যোগ নিন, আমরা সঙ্গে আছি।  ইতিমধ্যে ডিএসসিসি যানজট নিরসনে নগরীতে ২০ কিলোমিটারের বেশি রোড মিডিয়ান নির্মাণ এবং ফুটপাতে ১৭ কিলোমিটার গার্ড রেইল স্থাপন, লেন বুঝে চলার জন্য ১০ কিলোমিটার রাস্তায় রোড মার্কিং, ১শ’ ২২টি জেব্রা ক্রসিং ও ২শ’ ২০টি ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয়েছে।  ৭ কিলোমিটার রোড মিডিয়ানের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।  ৪০টি ট্রাফিক সিগন্যাল সচল করে এগুলোতে সোলার প্যানেল, কাউন্ট-ডাউন টাইমার ও অটো ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে।  এরই মধ্যে ১৯টি সিগন্যাল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  এগুলো কার্যকর হলে ট্রাফিক সিস্টেমে এক বিশেষ পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস।  এছাড়া ২শ’ ২০ কিলোমিটার প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।  নগরীর ৮টি স্থানে ৫শ’ ৬০টি অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে।  ১৮টি ইন্টারসেকশন উন্নয়ন এবং ১২টি নতুন ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারের তৃতীয় পর্ব পড়ুন আগামীকাল।

** ‘উন্নয়নের স্রোতধারায় ঢাকা আজ বদলে যাওয়া নগরী’


ঢাকা/আসাদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়