ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘দিনরাত কাজ করে ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য ধরে রেখেছি’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দিনরাত কাজ করে ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য ধরে রেখেছি’

মো. জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী (ছবি: রাইজিংবিডি)

মো. জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের বড় ছেলে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। দশম সংসদে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শপথ নেন তিনি। বুধবার ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য, ব‌্যর্থতা, ক‌্যাসিনোকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির সচিবালয় প্রতিবেদক আসাদ আল মাহমুদ।

রাইজিংবিডি: মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর হয়েছে। কী কী চ‌্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: দায়িত্ব নেয়ার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করা হয়। প্রথমবারের মতো বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো ১০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন, মাত্র চার মাসের ট্রেনিং নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে আমরা পদক তালিকায় আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদক পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৪০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার প্রথমদিন থেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। দিনরাত কাজ করে ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

সাফল‌্যের মধ‌্যে রয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ১৩তম আসরে ১৯টি স্বর্ণ, ৩৩টি রৌপ্য, ৯০টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪২টি পদক জিতে নিজেদের ইতিহাসে সেরা সাফল্য তুলে নেয় বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ১০টি স্বর্ণ পদক এবার বাংলাদেশ পেয়েছে আর্চারি থেকে। প্রথম বছরে আরেকটি বড় সাফল্য বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ জয়। নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের পদক তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী রোমান সানা। এই জয়ের সৌজন্যে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ নিশ্চিত হয় তার। বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন্স ইন্টারন্যাশনাল গোল্ডকাপ ২০১৯ এর ফাইনালে বাংলাদেশ ও লাউসের ম্যাচটি পণ্ড হয় বৈরি আবহাওয়ার কারণে। ফলাফল দুই দলই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন। এই গোল্ডকাপেরই সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমার করা যুগান্তকারী গোল করে জায়গা করে নেয় ফিফার ফ্যানস ফেভারিট হিসেবে।

রাইজিংবিডি: প্রধানমন্ত্রী সাউথ এশিয়ান গেমসের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। অন্য কোনো খেলার জন্য বাজেট বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আর্থিক অনুমোদন চাওয়ার সাথে সাথে তিনি দেন। সাউথ এশিয়ান গেমসের জন্য বাজেট ছিল না। প্রধানমন্ত্রী ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া বাজেট খুবই কম। এটা বাড়াতে পারলে ভালো হতো। এটা নিয়ে কাজ করছি।

রাইজিংবিডি: আবাসন না থাকায় অনেক স্টেডিয়াম কাজে লাগছে না, এ বিষয়ে পরিকল্পনা কী?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: আবাসন না থাকায় গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের স্থাপনাগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক খেলা হলে খেলোয়াড়রা থাকবেন কোথায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছি স্টেডিয়ামের পাশে ছয়তলা ডরমিটরি নির্মাণের জন্য। এছাড়া কক্সবাজারে ক্রিকেট এবং ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা নিয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি।

রাইজিংবিডি: ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার সময় ঢাকায় চাপ পড়ে। এটি কমাতে কোনো পরিকল্পনা আছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: রাজধানীর চাপ কমাতে বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন করা হবে।

রাইজিংবিডি: অনেক স্টেডিয়াম খেলার অনুপযোগী। স্টেডিয়ামগুলোর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারে শিগগিরই টেন্ডার হবে। এজন্য ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ স্টেডিয়ামের গ্যালারি শেড করে দেয়া হবে। নতুন ফ্লাডলাইট লাগানো হবে। কমলাপুর স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করা হবে। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে বিসিবি বুয়েটকে দিয়ে সার্ভে করাচ্ছে। প্রতিবেদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।

রাইজিংবিডি: প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া কমপ্লেক্সের নকশা কী চূড়ান্ত হয়েছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে খোলা মাঠে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে কমপ্লেক্সের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী কমপ্লেক্সের নকশা দিয়েছেন।

রাইজিংবিডি: ক্লাবগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। ক্যাসিনোকাণ্ডের পর কী ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার সুযোগ আছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: মূল পরিচয় স্পোর্টস ক্লাব। স্পোর্টস ক্লাব হিসেবেই পরিচিত। যারা লিমিটেড ক্লাব তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। কোনো ক্লাব টুর্নামেন্ট বা লিগে অংশগ্রহণ না করলে ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করতে পারি না। কিছু ক্লাব ক্যাসিনো কর্মকাণ্ড চালালেও মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারেনি। জবাবদিহি ও মনিটরিংয়ের জন্য হলেও তাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

রাইজিংবিডি: দিন দিন কমছে খেলার মাঠ। কিশোর-তরুণরা সারাদিন ইটপাথরের মাঝে বন্দি। খেলার জায়গা না পেয়ে মাদক-সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। তরুণদের রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: তরুণদের খেলাধুলার সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে জেলা, উপজেলাভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় খেলার মাঠ নেই, সেখানে মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।

রাইজিংবিডি: বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াঙ্গনকে কীভাবে সাজিয়েছিলেন?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু  ক্রীড়াঙ্গনে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খেলাধুলায় কিশোর-যুবকদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ অনুভব থেকেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে নিজে খতিয়ে দেখতেন। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ায়। ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। এই সংস্থাটি শিক্ষা-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। পরে ক্রীড়াঙ্গনের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট। ক্রীড়াঙ্গনে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার তার পরিকল্পনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। বঙ্গবন্ধুই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

রাইজিংবিডি: মুজিববর্ষে জমজমাট থাকবে ক্রীড়াঙ্গন। কত ইভেন্টের আয়োজন থাকছে?

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে মন্ত্রণালয় শতাধিক ইভেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এশিয়া ও বিশ্ব একাদশ নিয়ে টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, এশিয়া কাপ হকি হবে বঙ্গবন্ধুর নামে। এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাতীয় ইভেন্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকসহ মোট ৮৯টি ইভেন্টের মধ্যে জাতীয় ইভেন্ট ৫০টি, আন্তর্জাতিক ৩৯টি। জাতীয় ৫০টি ইভেন্টের ৪০টি বিভিন্ন ফেডারেশন ও ১০টি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজন করবে। দুটি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। একটি আগামী ১৯ মার্চ অপরটি ২১ মার্চ। এশিয়া এবং বিশ্ব একাদশ নিয়ে বিসিবি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজন করবে। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় যুব টি টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের (অনুর্ধ্ব-২৩) আয়োজন করবে বিসিবি। যা আগামী এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সুবিধাজনক সময় আয়োজন করা হবে।

জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট কার্নিভালের (অনূর্ধ্ব-১২ বালক ও বালিকা) আয়োজন করবে বিসিবি। যা আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২০ আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজন করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ গেমস (৩১টি ইভেন্টস) অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আগামী মার্চে আয়োজন করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্টের (১২টি দেশ) আয়োজন করবে হকি ফেডারেশন। যা আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টারস দাবা প্রতিযোগিতার (ঢাকা) প্রথম আয়োজন হবে আগামী মার্চে। দ্বিতীয় প্রতিযোগিতা (চট্টগ্রাম) আগামী জুন-জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ (অনূর্ধ্ব-৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮) দাবা ফেডারেশন তাদের সুবিধাজনক সময়ে আয়োজন করবে।

পড়ুন

>

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়