ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘বইয়ের কোয়ালিটি চাই, কিন্তু ছাপাখানা বুঝতে চায় না’

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বইয়ের কোয়ালিটি চাই, কিন্তু ছাপাখানা বুঝতে চায় না’

প্রকাশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে পেন্ডুলাম। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০২০) নতুন প্রকাশন হিসেবে প্রথমবার স্টল পেয়েই পেন্ডুলাম বেশ সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে বই প্রকাশে বিষয় বৈচিত্র্য, মানসম্মত গ্রন্থ এবং ভালো ছাপার ক্ষেত্রে নজর কেড়েছে পেন্ডুলাম। গত ৬ ফেব্রুয়ারি পেন্ডুলামের প্রকাশক রুম্মান তার্শফিকের সঙ্গে কথাসাহিত্যিক সাইফ বরকতুল্লাহর যে আলাপচারিতা হয়- বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে তারই শ্রুতিলিপি তৈরি করেছেন আরিফ আহমেদ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনার প্রকাশনা জগতে আসার পেছনের গল্পটি বলুন?
রুম্মান তার্শফিক:
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল প্রকাশক হবো। যখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি তখন থেকে এ স্বপ্ন। প্রথমবার বাবার সঙ্গে বইমেলায় যাই, সে সময় এত বই দেখেই আমার মাথা খারাপ অবস্থা, বিভিন্ন বই দেখতে দেখতে বাবা বললেন, ‘এত বই কোথা থেকে আসছে জান’? বাবা নিজেই উত্তর দিলেন যে, এসব বই লেখকেরা লিখেছেন তাই এসেছে। তখনই আমি বললাম যে তাহলে আমি লেখক হবো। বাবা বললেন লেখকের আগে আরেকজন আছে যে এসব তৈরি করে। তখন আমি বললাম লেখক নিজে নিজে এসব বাঁধাই করে না? বাবা জবাব দিলেন, লেখক এত কষ্ট করবে কেন? এসব করে অন্যলোক। কিন্তু যারা এগুলো সিলেক্ট করে, মার্কেটে প্রচার করে এটা আরেকজন আছে। আমি বললাম, কে? তিনি জানালেন, প্রকাশক। তখনই আমি প্রকাশক শব্দটি প্রথমবার শুনি। তখন আমি বললাম, তাহলে আমি বড় হয়ে প্রকাশক হবো। লেখক হওয়া বাদ। বাবা সেটা মজার ছলেই নিয়েছিলেন। তিনি বললেন, তাহলে তোমাকে অনেক পড়তে হবে, জানতে হবে। লেখকরা যে ভুল জিনিস দিবে সেটা তো তুমি বের করতে পারবা না। তখন আমি অনেক ফাঁকিবাজ ছিলাম, ফাঁকিবাজ মানে ক্লাস ফোরে ফেল করতাম। এরপর বাসায় আসার পর আমার পড়াশোনায় অনেক পরিবর্তন হলো। আমি পড়তে পছন্দ করতাম বা বাবাকে বলতাম আমার এই বই লাগবে অথবা বইয়ের দোকানগুলোতে ঘুরতাম। এভাবেই শুরু।

সাইফ: আমি যতদূর জানি আপনি চিকিৎসা বিদ্যায় পড়ালেখা করছেন?
রুম্মান তার্শফিক:
হ্যাঁ।

সাইফ: চিকিৎসা বিদ্যায় তো প্রচুর পড়তে হয়, এদিকে প্রকাশনীর জন্যও প্রচুর পড়তে হয়। একটি বই বের করতে হলে বইটি পড়া ও সম্পাদনা করতে হয়। দুইদিকের যে পড়াশোনা এই সময় আপনি কীভাবে মেলাচ্ছেন?
রুম্মান তার্শফিক:
আসলে এই বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের ফেব্রুয়ারিতে একটি পরীক্ষা হয় এবং আগস্টে একটি পরীক্ষা হয়। যেকোনো এক সময়ই পরীক্ষা দেওয়া যায়। ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নিয়মিতদের আর আগস্টে অনিয়মিতদের। আমি ক্লাস করি ফেব্রুয়ারির নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে, কিন্তু পরীক্ষা দেই আগস্টে। এটা আমি বিগত দুই বছর থেকেই করে আসছি। আর আরেকটি উপায়ে যেভাবে সময় বের করি তা হলো আমি যখন পাণ্ডুলিপি পাই, তখন পুরোটা নিজে একবার পড়ি। যেখানে যেখানে সমস্যা পাই লাল কালিতে আন্ডারলাইন করে রাখি। তখনও কিন্তু পাণ্ডুলিপি সিলেক্ট করিনি। পড়ে লেখককে জানাই এই জায়গায় আমার সমস্যা মনে হচ্ছে, আর সিলেক্ট করার কথা তখন জানিয়ে দেই নেব কি নেব না। কেন নেব না তখন তিনি দাগগুলো দেখলেই বুঝতে পারে। এতে আমার সুবিধা হয়। এটা আমার আর পড়তে হয় না। পরে যে সমস্যা সেটা প্রুফে পাঠিয়ে দেই। আবার প্রুফ আসলে আমার বন্ধু মিঠুন আমার সঙ্গে কাজ করে। সে মেকআপ করে তৈরি করে দেয়। এ কারণে দেখা যায় আমার একবারই পড়তে হয়। বারবার পড়ার দরকার হয় না। আর একাজ আমি সব সময় সব বইয়ের ক্ষেত্রেই করি।

সাইফ: আপনি তো নতুন প্রকাশক (এবারই প্রথম মেলায় স্টল), প্রকাশনা জগতে আসার পর কী কী প্রতিবন্ধকতা মনে হচ্ছে? 
রুম্মান তার্শফিক:
প্রথমেই ছাপাখানার কথা বলি, প্রকাশকের অবশ্যই ছাপাখানায় যেতে হয়। ছাপাখানার কথা যদি বলি তাহলে আমি বলব ওরা ছাপাখানার বিষয়ে সঠিকভাবে (ওয়েল এডুকেটেড) জানে না। যেমন আমি গ্লু বাইন্ডিংটা (Glue Binding) চাচ্ছি, বলছি আগে আপনি হাতে সেলাই করবেন তারপর গ্লু দিবেন পেপারব্যাকের জন্য। আর আমি সব সময় পেপারব্যাকটাই করি। তখন দেখা যাচ্ছে তারা গ্লু বাইন্ডিং দিচ্ছে, কিন্তু দেখি যে লুজ লুজ। যখন বলি যে আসলে আপনার তো হচ্ছে না। আপনি জিনিসটা আরেকটু বেশি দিবেন বা এই গ্লু টা ব্যবহার করবেন। তখন ওরা খুব বিরক্ত হয়। আমি যত ছাপাখানায় গিয়েছি সব ছাপাখানার কর্মীরা আমার ওপর বিরক্ত হয়। আমি বলছি যে আপনি ৩০০ জিএসএম সুইডিশ বোর্ড দিবেন সবগুলো কভারে। তিনি হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন সুইডিশ বোর্ড নিয়ে আসল। আমি বলছি আমি ৩০০ জিএসএম সুইডিশ বোর্ড দিতে বলেছি আপনি কোথা থেকে এই আর্টকার্ড নিয়ে এসেছেন? আর্টকার্ড তো আমি দিতে বলিনি, পেপারব্যাকে আর্টকার্ড আমার পছন্দ না। এরকম আমার ভালো ভালো তিনটি বই তারা আর্টকার্ড দিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছে। অথচ সুইডিশ বোর্ড দিলে আরো স্টাইলিস লাগতো। আমি চাচ্ছি যে বইয়ের স্ট্যান্ডার্ড একটা কোয়ালিটি বজায় রাখতে, এই বিষয়গুলো ছাপাখানা মালিকরা বুঝতে চায় না। তারপর প্রুফ রিডিংয়ে একটা বড় সমস্যা। একেকজন একেক টেকনিকে প্রুফ রিডিং করে। আমি যেটা চাচ্ছি সেটাও কেউ দিতে পারছে না। তখন দেখা যায় যে আমিও বলি, আমি প্রথম আলোও চাচ্ছি না আমি বাংলা একাডেমিও চাচ্ছি না, আমি সংসদও চাচ্ছি না। আমি তিনটারই বেসিক ঠিক যেটা, সেটা চাই। তিনটারই বেসিক কিছু আছে সেই ঠিকগুলোই আপনি দিবেন। এই বিষয় নিয়ে প্রুফ রিডারের সঙ্গে আমার প্রচুর সময় লাগে। এখনো বেশির ভাগ মানুষ আছে যারা হাতে প্রুফ দেখে তাদের নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। একটা দুইশ পৃষ্ঠার প্রুফ দেখতে একদিন চলে যায়। এটা যে দেখে তার জন্যও খুবই বিরক্তিকর। এখনো কম্পিউটারাইজড প্রুফ রিডার খুবই কম- এটা একটা সমস্যা।

সাইফ: আপনারতো একটা উদ্দেশ্য আছে, পরিকল্পনা আছে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আপনি প্রকাশনা শুরু করেছেন। আমরা প্রায়ই শুনি যে আমাদের বেশির ভাগ প্রকাশক বইমেলা চলে গেলে বই নিয়ে বাজারজাত, বিপণন করে না, তারা শুধু মেলাকেন্দ্রীক। এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।রুম্মান তার্শফিক:  যেটা সমস্যা দেখা যায় যে, আমি আপনাকে দশটা নাম বলতে পারব এরকম যারা চায় যে তাদের বইগুলো সারা বছর বিক্রি হোক। আর যারা চায় না- এর কারণ হচ্ছে তারা বইয়ের প্রতি দায়বদ্ধ না। তারা দায়বদ্ধ না হয়েই বই বের করে। আমার বইটা আমি কেন বের করছি, এটার কোনো উত্তর তাদের কাছে থাকে না। পাণ্ডুলিপি পেয়ে কোনো চিন্তা করে না, কেন বইটি বের করবে, বইয়ের গুণগত মান কেমন, বাজারে চলবে কিনা- এই বিষয়টিতে তারা দায়বদ্ধ নন। এজন্য বিষয়টি ঘটছে। যেমন আপনি বললেন মার্কেটিং করছে না বইমেলা শেষে রেখে দিচ্ছে। কেন তারা রেখে দিচ্ছে মার্কেটিং করছে না, বই যদি চলতো তাহলে পাঠকরাই এসে প্রকাশক ও লেখককে বলতো আমরা বইটি চাই। রকমারি, বইপোকাসহ অন্য যেসব অনলাইন পোর্টাল আছে- তারা নিজে গিয়ে প্রকাশককে বলতো বইটি আমাদের দেন। তাহলে কতদিন গুদামে রেখে দিতে পারবে? এই যে সমস্যা বইয়ের কথা জানে না। আবার এমন অনেক সময় হয় কিছু প্রকাশনী আমি দেখেছি ভালো কিছু টপিকের বই তারপরও সেটা মার্কেটিং করা হচ্ছে না।

সাইফ: প্রতি বছরই বইমেলা নিয়ে সমালোচনা হয়, বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে যেমন বই এডিটিং হচ্ছে না। কিন্তু বড় বড় প্রকাশনা সংস্থা তাদের নিজস্ব সম্পাদনা পরিষদ থাকে। নিশ্চই আপনি এই বিষয়ে জোর দিচ্ছেন।
রুম্মান তার্শফিক:
সম্পাদনা পরিষদ সবার আছে কি না সেটা আমার জানা নেই। এমনকি অনেকের প্রুফ রিডারও নেই। যেমন আমার নিজস্ব কোনো প্রুফ রিডার নেই। আমি একেকবার একেক জনকে নেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। এমনকি আমার সম্পাদনায় যারা আছেন তারাও আমার নিজের নয়। মানে আমার কাছ থেকে মাসিক বেতন পাচ্ছে এমন নয়। প্রত্যেক বই হিসেবে আমি তাদের বিল পরিশোধ করি। দেখা যায় সম্পাদনার যে খরচ তা ওঠানো কঠিন হয়ে যায়। বই যদি কম বিক্রি হয় তিন-চারশ কপি তখন দেখা যায় সম্পাদনা খরচ আসে না। তখন আমি যেটা করি সেটা হলো আমি তাদের বলি আমার বই কম বিক্রি হবে, তাই আমি টাকা কম দেব, তবুও আপনি আমার বইটি সম্পাদনা করে দিন। তখন আমি দেখলাম তারা হতাশ হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ না করেননি। আমি সম্পাদনা নিয়ে অনেক সেনসেটিভ। সম্পাদনা এবং প্রুফ এই দুটি বিষয়ে আমি সিরিয়াস। আর অন্য প্রকাশনী যারা প্রতিষ্ঠিত তাদেরও এটা অনেক সংকট। ভালো এডিটর পাওয়া খুব কষ্ট এটাও একটা সমস্যা।

সাইফ: গত বইমেলায় আপনি যখন শুরু করেন আপনার কয়েকটি বই আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমার মনে হয়েছে আপনি বেছে বেছে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আপনি কী ধরনের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিচ্ছেন। 
রুম্মান তার্শফিক:
আমি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেই- বই বহন করা। আমি নব্বই শতাংশ বই পড়েছি রাস্তায়। ছোটবেলায় কোচিং করতাম তখন এক কোচিং থেকে আরেক কোচিংয়ে যাবার সময় রিকশায় বসে বসে পড়তাম। শিক্ষকের বাসায় যখন তার আসতে পাঁচ-দশ মিনিট দেরি হতো তখন আমি বসে বসে বই পড়তাম। আমি তখন থেকেই বই বহন করা নিয়ে সমস্যায় পড়তাম। তখন মনে মনে ভাবতাম সাতকাহন বইটি কেন দুই খণ্ড  করা হয়েছে, ওই বইটি আরেকটু ছোট করে চার-পাঁচ খণ্ড করা হয়নি। বেশি খণ্ড করলে কত সহজ হয়ে যেত। আমি একমাস ধরে সাতকাহন পড়েছি, আমার ব্যাগে এত মোটা একটি বই সব সময় থাকতো এর মধ্যে কোচিং এবং স্কুলের বইতো থাকতই। তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। এই সমস্যার সম্মুখিন হওয়ার কারণেই আমি সব সময় চেষ্টা করি হাতে বহন করার মতো বই নেওয়ার। সেটা মোটা বই হলে পেপারব্যাক করার যাতে সব সময় হাতে বহন করার মতো হয়। যাতে মানুষ বই হাতে নিয়ে বাসে উঠে বইটি দেখতে পারে বা সহজে ব্যাগে বহন করলেও মনে না হয় অনেক ভারী একটি বই বহন করছি। গত বছর যেটা হয়েছে আমি একটু ছোট সাইজ করে কভার করেছিলাম কিন্তু এবার তা করছি না। এবার ছোট সাইজটাই রাখছি কিন্তু এবার পেপারব্যাকে চলে যাচ্ছি। যাতে বহন করলে ওজনটা কমে। আর আরেকটি বিষয় আমার বইয়ের দাম দশ টাকা কমছে। যে বইটা এখন আমি তিনশ বিশ টাকা রাখছি আগে সেটা তিনশ ত্রিশ টাকা রাখা লাগত। পাঠকদের কাছ থেকে আমি বেশি টাকা নিতে চাই না। এই বিষয়ে আমি সবসময় সতর্ক থাকি। আমার যতটুকু ন্যায্য আমি ততটুকু টাকাই নেব। যেটা আমার ন্যায্য নয় সেটা আমি কেন নেব। যত কমানো যায় সেটা আমি চেষ্টা করি সব সময়।

সাইফ: এবার বইমেলায় পেণ্ডুলাম থেকে কয়টি নতুন বই এসেছে?
রুম্মান তার্শফিক:
পনেরটি বই করেছি এবার।

সাইফ: এখনতো লেখার অনেক মাধ্যম। ফেসবুক, পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। প্রচুর লেখকরাও আসছেন। এই যে লেখকদের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে, একজন প্রকাশক হিসেবে এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
রুম্মান তার্শফিক:
এই প্রসার হওয়া ভালো। প্রচুর মানুষ লেখালেখিতে আসছে বা লেখার চেষ্টা করছে এটাও ভালো। যারা অনলাইনে বই আকারে ই-বুক করে তারা সম্পাদনা বা প্রুফের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকে। কিন্তু আমি যদি সামাজিক মাধ্যমগুলোকে লেখকদের জায়গা মনে করি তাহলে হবে না। লেখকদের হয়তোবা সেই মাধ্যমে শুরু হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে লিখলেই শুধু লেখক হওয়া যায় না। আগে আমাকে পড়ে আসতে হবে। আমি কেমন লেখক হতে চাচ্ছি সেটা থ্রিলার হতে পারে, যেকোনো সাহিত্য হতে পারে, যেকোনো কিছু হতে পারে। আমি যেটা হতে চাচ্ছি সেটা নিয়ে আগে পড়াশোনা থাকতে হবে। ফেসবুকে লিখলেও আগে পড়া থাকতে হবে সেই টপিক নিয়ে। আর যদি কেউ সামাজিক মাধ্যমে নিজের একটা সার্কেল তৈরি করে, রম্য নিয়ে লিখতে চায় বা খুবই হালকা বিষয় নিয়ে লিখতে চায় সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু বই আকারে বা একটা ডাটাবেসে এন্ট্রি করা একটি বইকে তখন আগে যেমন লেখকরা প্রচুর পড়ে আসতো, সে সময়ের মতোই থাকে।

সাইফ: আন্তর্জাতিকভাবে বা বাংলা ভাষায় ভালো ভালো কিছু কিছু বই ইংরেজিতে অনূদিত হওয়া দরকার। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে?
রুম্মান তার্শফিক:
কিছু পরিকল্পনাতো অবশ্যই আছে। ইংলিশের কিছু পরিকল্পনা আছে। আমি সবার আগে পরিকল্পনা করতে চাই চাইনিজ মার্কেটটা ধরতে। আমি বাংলা বই চাইনিজে অনুবাদ করতে চাই। এটার কারণ হচ্ছে চাইনিজ মানুষ বা অনেক বড় একটা গোষ্ঠীকে আমি পাব এটা ইংলিশের চেয়ে অনেক বেশি। সবাই হয়তো ইংলিশ শিখে যোগাযোগ রক্ষার জন্য কিন্তু আমি যদি ওদের ভাষায় আমার বইগুলো নিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমি একটি মার্কেট তৈরি করতে পারব ওখানে। এটা আমি বিশ্বাস করি।

সাইফ: পাশাপাশি বাংলাদেশি পাঠক তৈরির জন্যও নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিবেন।
রুম্মান তার্শফিক:
আমার এই বিষয়েও পরিকল্পনা আছে।

সাইফ: যারা তরুণ প্রকাশক হতে চায় তাদের জন্য আপনার কী মতামত?
রুম্মান তার্শফিক:
প্রথমে আমি একটি কথা বলি। আমার চারপাশের অনেক মানুষ আছে হুট করে তারা এসে আমাকে বলে তোমাকে দেখে প্রকাশক হতে চাই। তখন শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু যখন দেখি তাদের ইচ্ছেটা আমি খুব দ্রুত এগিয়ে দিচ্ছি এটা দেখে তখন আমার হাসি পায়। ওর নিজের একটা আগ্রহের জায়গা তৈরি করে, নিজে একটা চিন্তা করা যে পরিকল্পনা করে কীভাবে। যেমন আমি ছোটবেলায় বিষয়গুলো পরিকল্পনা করতাম। কী করবো, কীভাবে করবো। আমি ছোটবেলা থেকেই লেখকদের সঙ্গে কথা বলতাম। এই যে বিষয়গুলো আমার মনে হয় এই জায়গাটা অনেক কাজ করার জায়গা।

সাইফ: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? 
রুম্মান তার্শফিক:
লেখক এবং প্রকাশকের সম্পর্ক অবশ্যই প্রফেসনালিজম রক্ষা করা উচিত। যেমন আমি আমার কোনো লেখককে বলছি আমার বই দেরিতে আসবে। কেন আসবে? এটার জবাবদিহি আমি করবো না। সহজ-সরল কথা যেমন আমি এভাবে বলি সবাইকে যে, কেন দেরিতে আসবে। আমার হাতে আরেকটি বইয়ের কাজ এসেছে যেটাতে আমি একটু বেশি লাভ করতে পারব, এই কারণে আমি আপনার বই একটু পরে করতেছি। কিন্তু আপনার বইটি আমি এই এই তারিখের মধ্যে করব। আমি যে তারিখ বলি সেই তারিখেই করার চেষ্টা করি। যদিও ছাপাখানা দেরি করে, আমার নিজের দেরি খুব কম হয়। যখন আমি কারো কাছে পাণ্ডুলিপি চাই, তখন এভাবে বলি যে আমি এই কারণে আপনার পাণ্ডুলিপি চাচ্ছি। আমি কখনো মিথ্যা বলে পাণ্ডুলিপি নেই না। আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান ফলোয়ার, এইটা সেইটা বলি না। আমি সত্যি বলি আমার আপনার লেখা ভালো লেগেছে, তাই আপনার পাণ্ডুলিপি চাচ্ছি। আবার এমন বলে অনেকে যে এই বইটা লস হবে আমি বই দেব না। তখন আমি বলি লস করলে আপনার লেখা আমার পছন্দ, আমি আপনার সবগুলো লেখা নিতেও রাজি। আমি সবসময় আপনার বই প্রকাশ করতে রাজি।


ঢাকা/সাইফ/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়