‘মাত্র ১৫ মিনিটেই বোঝা যাবে রোগী করোনা আক্রান্ত কি না’
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই যখন উদ্বিগ্ন, ঠিক তখন আশার খবর দিয়েছে জাফরুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠানটি করোনা শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করছে বলে দাবি করছে। যে কিট দিয়ে মাত্র ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে করোনার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব। আর খরচও একেবারেই কম।
করোনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবন-করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ড. জাফরউল্লাহ’র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন।
রাইজিংবিডি: করোনা রোগী শনাক্তে আপনাদের উদ্ভাবিত কিট সম্পর্কে জানতে চাই।
ডা. জাফরুল্লাহ: করোনা নির্ণয়ের একটি মাত্র পদ্ধতি ছিল। সেটি হলো পিসিআর পদ্ধতি। তবে পদ্ধতিটা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। খুব দামি যন্ত্র প্রয়োজন হয়। দক্ষ জনবলও দরকার হয়। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় রিপোর্ট দিতে ২ থেকে ৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু পিসিআর এর রিপোর্ট ভালো। আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিনেই রোগীকে শনাক্ত করা যায়, কিন্তু রিপোর্ট দিতে দুই থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। আমরা যেটা উদ্ভাবন করেছি এটা হল ‘র্যাপিড ডট ব্লট’। এটা উদ্ভাবন করেছেন ডক্টর বিজয় কুমার শীল এবং তার সঙ্গে তিনজন তরুণ বিজ্ঞানী (আদনান, জমির উদ্দিন, ফিরোজ আহমেদ)। এ পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফলাফল দিয়ে দেওয়া যায়।
রাইজিংবিডি: পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে একটু বলুন।
ডা. জাফরুল্লাহ: অনেকে প্রশ্ন করেন যে, পরীক্ষা করতে এটা প্রয়োগে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে কিনা। কিন্তু এটাতো শরীরে কোনোভাবেই প্রয়োগ করা হবে না। এই পদ্ধতিটা হচ্ছে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মতো। মানুষের শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে এর উপরে দিয়ে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বোঝা যাবে যে, তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা। তার মানে এটা মানুষের শরীরে প্রয়োগের কোনো বিষয় নেই।
রাইজিংবিডি: করোনা শনাক্তের এই পরীক্ষা কেমন ব্যয়বহুল।
ডা. জাফরুল্লাহ: এই পরীক্ষার খরচ খুবই কম। দুইশ থেকে আড়াইশ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। যেহেতু পিসিআরের মতো বড় যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না, এটা সব জায়গায়- চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি, ওষুধের দোকান, বিভিন্ন জায়গাতেই বসে পরীক্ষাটা করা যাবে। এটার সুবিধা হচ্ছে আক্রান্ত হওয়ার পর তৃতীয় দিনের রক্ত লাগবে। পিসিআর পদ্ধতিতে প্রথম দিনের রক্ত লাগে আর এ পদ্ধতিতে তৃতীয় দিনের রক্ত লাগে। পিসিআর পদ্ধতিতে প্রথম দিনের রক্ত দিলে রিপোর্ট পঞ্চম দিনে পায়। আর এ পদ্ধতিতে তৃতীয় দিনেই পরীক্ষার ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়।
এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সারাবিশ্ব উঠে পড়েছে এটা জানার পরে। যেমন আমেরিকার সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল) জানিয়েছে, আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। কয়েকটি দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা এটার সত্ত্ব কিনে নিতে চায়। কিন্তু আমরা বলেছি না, এটা আমরা জনগণের জন্য।
রাইজিংবিডি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, এই পদ্ধতিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পজেটিভ রোগীর নেগেটিভ আসে, তারপরও তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন, এ বিষয়ে কী বলবেন?
ডা. জাফরুল্লাহ: নেগেটিভ আসার ধারনাটা ঠিক নয়।
রাইজিংবিডি: এই রোগের বিস্তার রোধে করণীয় কী?
ডা. জাফরুল্লাহ: রোগটা যাতে বিস্তার না করে সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, বাস স্ট্যান্ড এখানে ইনফ্রারেড টেম্পারেচার যারাই সাসপেক্ট তাদের আলাদা করা। মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা-চার্চে প্রবেশের সময় ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাইজিংবিডি: করোনা সচেতনতায় গণজমায়েতে লিফলেট বিতরণ, সভা-সমাবেশ করছে, এটা ঠিক হচ্ছে কিনা।
ডা. জাফরুল্লাহ: এটাও কমানো দরকার, এখন সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
রাইজিংবিডি: এখনো দেশের বাইরে থেকে লোক আসছে এ সম্পর্কে কী বলবেন।
ডা. জাফরুল্লাহ: তারাতো বাংলাদেশি নাগরিক, তাদের দেশে ফেরার অধিকার আছে। তারা আমাদের দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ঢাকা/সাওন/জেডআর
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন