ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনে ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি, হচ্ছে রপ্তানি’

অগাস্টিন সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ২১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৯:১২, ২১ অক্টোবর ২০২০
‘ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনে ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি, হচ্ছে রপ্তানি’

প্রকৌশলী আল ইমরান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্স

করোনাভাইরাস মহামারিতে যেসব গৃহস্থালী যন্ত্র বেশি কাজে লাগছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ওয়াশিং মেশিন। আধুনিক জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছ্যন্দময় করতে এই গৃহস্থালী পণ‌্যের  জুড়ি নেই। বর্তমানে ওয়াশিং মেশিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠেছে। দামটাও চলে এসেছে সবার হাতের নাগালে। বাংলাদেশে নিজস্ব কারখানায় বিশ্বমানের পণ্য তৈরি ও সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন। সর্বশেষ চার মাসে (জুন-সেপ্টেম্বর) দেশের বাজারে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন বিক্রিতে ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে রপ্তানিও। ইতোমধ্যেই নেপাল, ইয়েমেন, পূর্ব তিমুর ইত্যাদি দেশে ওয়াশিং মেশিন রপ্তানি করেছে ওয়ালটন। খুব শিগগিরই ভারতে রপ্তানি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন। সব মিলিয়ে দেশের বাজারে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের হিস্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে রপ্তানি কার্যক্রম। দেশে ওয়াশিং মেশিনের উৎপাদন, বিপণন, রপ্তানি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী আল ইমরানের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অগাস্টিন সুজন।

করোনাভাইরাস দুর্যোগের কারণে ব্যবসা খাত বেশ কঠিন সময় পার করছে। এ সময়ে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি কেমন হচ্ছে?
আল ইমরান:
করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং পুরো বিশ্বের অর্থনীতির ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও বর্তমানে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। করোনার কারণে শুরুর দিকে যে ধাক্কা ছিল, তা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। সত্যি কথা বলতে করোনাকালীন বেশকিছু গৃহস্থালী পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। যার মধ্যে অন্যতম ওয়াশিং মেশিন। গত ৪ মাসে (জুন থেকে-সেপ্টেম্বর) ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনে ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

কত সাল থেকে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন তৈরি শুরু করছে?
আল ইমরান:
২০১৭ সাল থেকে ওয়ালটন বাংলাদেশে নিজস্ব কারখানায় ওয়াশিং মেশিন তৈরি করছে। তবে এরও দুই বছর আগে থেকে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন বাজারে ছাড়া হয়। ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন তৈরি হচ্ছে দেশের মানুষের পছন্দ, প্রয়োজনীয়তা, ক্রয় সক্ষমতা, আবহাওয়া ইত্যাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। এতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের সমন্বয় ঘটেছে। নিবিড় তত্ত্বাবধানে মান নিয়ন্ত্রণ করে ওয়ালটনের প্রতিটি ওয়াশিং মেশিন বাজারে ছাড়া হয়।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন কারখানা সম্পর্কে বলুন। আয়তন, কর্মী, দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা কত?
আল ইমরান:
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের সুবিশাল অত্যাধুনিক কারখানা অবস্থিত। পুরো ওয়ালটন কারখানার আয়তন সাড়ে সাতশ একরেরও বেশি। শুধু ওয়াশিং মেশিন তৈরির কারখানার আয়তন ৭০ হাজার বর্গফুট। এখানে কাজ করছেন কয়েক হাজার কর্মী। বর্তমানে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ইউনিট। এর অর্থ বাংলাদেশে বর্তমানে ওয়াশিং মেশিনের যে চাহিদা, তা মেটানোর পরও আমরা বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে পারবো।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওয়ালটনের অন্যান্য পণ্যের মতো ওয়াশিং মেশিনের জন্য রয়েছে শক্তিশালী আরএন্ডডি (গবেষণা ও উন্নয়ণ) বিভাগ। এখানে কাজ করছেন দেশের একঝাঁক মেধাবী প্রকৌশলী। যারা ওয়াশিং মেশিনের ডিজাইন, নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ফিচার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন। যার ফলে গ্রাহকরা তাদের বাজেটের মধ্যে দেশে তৈরি স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী সেরা মানের টেকসই পণ্য পাচ্ছেন।

ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় কোন বিষয়গুলো গ্রাহকের বিবেচনা করা দরকার?
আল ইমরান:
ব্যবহারকারীর বাজেট এবং ব্যবহারের ধরন ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে ওয়াশিং মেশিন কেনা উচিত। প্রথমত, সেমি অটোমেটিক এবং অটোমেটিক টপ ও ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী একটি বেছে নিতে হবে। এছাড়াও, ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় এর ফিচার, ক্যাপাসিটি, বিক্রয়োত্তর সেবা, বিদ্যুৎ খরচ, ডিটারজেন্ট ও পানি সাশ্রয়ের ক্ষমতা ইত্যাদি দেখে কেনা দরকার।

বর্তমানে কয় মডেলের ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন বাজারে আছে? দাম কেমন?
আল ইমরান:
বর্তমান বাজারে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদার ভিত্তিতে সবার বাজেটের মধ্যে সর্বোচ্চ গুণগতমানসম্পন্ন ১৪ মডেলের সেমি অটোমেটিক এবং অটোমেটিক টপ ও ফ্রন্ট লোডিং ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন রয়েছে। ৬ থেকে ১২.৫ কেজি পর্যন্ত ধারণক্ষমতার এসব ওয়াশিং মেশিনের মূল্য মাত্র ৬,৯০০ টাকা থেকে ৪৮,০০০ টাকার ভেতর। এর মধ্যে দেশের সব শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য ১০টি মডেলের ওয়াশিং মেশিনের দাম আমরা ২০,০০০ টাকার মধ্যে রেখেছি।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের বিশেষ সুবিধা কী? এর ফিচারগুলো সম্পর্কে বলুন।
আল ইমরান:
ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন সুদৃশ্য। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এতে অত্যাধুনিক সব ফিচার রয়েছে। নগদ মূল্যের পাশাপাশি রয়েছে ইএমআই (ইকুয়্যাল মান্থলি ইন্সটলমেন্ট) এবং কিস্তি সুবিধায় ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন কেনার সুযোগ রয়েছে। ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনে গ্রাহকরা পাচ্ছেন ফ্রি ইন্সটলমেন্ট ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা।

উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্সি-ফ্রেশ, যা কাপড়কে রাখে দীর্ঘক্ষণ ফ্রেশ। রয়েছে মরিচা ও ব্যাকটেরিয়ারোধী ফিচারসমৃদ্ধ ড্রাম, চাইল্ড লক, ইউজার ফ্রেন্ডলি অটোমেটিক আইএমডি কন্ট্রোল প্যানেল, টাচ কন্ট্রোল প্যানেল, এরর মেসেজ ইন্ডিকেশন ও অ্যালার্ম সিস্টেম, টেম্পারড গ্লাস ডোর, এন্টিব্যাকটেরিয়াল ডোর সিল সমৃদ্ধ সুপার লার্জ দরজা, এলিগ্যান্ট রিংকেল ফ্রি ওয়াশ, অত্যাধুনিক থ্রিডি মোশনসমৃদ্ধ হাই ইফেকটিভ পালসেটর, ইফেকটিভ লিন্ট ফিল্টার, ইকোনমিক্যাল কুইক ওয়াশ, অত্যাধুনিক ফাজি কন্ট্রোল অটোমেটিক ওয়াশ ইত্যাদিসহ অসংখ্য ফিচার।  এছাড়া, আমরা কন্ট্রোল প্যানেল সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় লেখা দুটি মডেলের টপ লোডিং ওয়াশিং মেশিন বাজারে ছেড়েছি। যা দেমের প্রথম বাংলা কন্ট্রোল প্যানেলযুক্ত ওয়াশিং মেশিন। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান এবং স্থানীয় গ্রাহকদের ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে সুবিধা বিবেচনায় এই মডেল দুটি বাজারে ছাড়া হয়েছে। 

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে বলুন।
আল ইমরান
: বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানে ওয়ালটন খুবই আন্তরিক। মডেল ভেদে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের প্রধান যন্ত্রাংশে (মোটর) সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি, ৫ বছরের হোম সার্ভিস এবং ১ বছরের বিনামূল্যের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে আমাদের ৭৬টি সার্ভিস পয়েন্ট থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক। পাশাপাশি ওয়ালটনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ, কল সেন্টার ইত্যাদির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ওয়ালটনের তৈরি ওয়াশিং মেশিন রপ্তানি হচ্ছে কী? হলে কোন কোন দেশে রপ্তানি হচ্ছে?
আল ইমরান:
দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ভারত, নেপাল, ইয়েমেন, পূর্ব-তিমুর ইত্যাদি দেশগুলোতে আমরা ওয়াশিং মেশিন রপ্তানি করছি। বাংলাদেশে তৈরি উচ্চমানের ওয়াশিং মেশিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। ফলে রপ্তানি বাজার বাড়ছে। খুব শিগগিরই ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন রপ্তানি তালিকায় আরও দেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে।  

ওয়াশিং মেশিন নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?
আল ইমরান:
আমরা ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে কাজ করছি। দেশীয় বাজার ও রপ্তানির জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির টপ ও ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিন তৈরি করতে যাচ্ছি। ওয়াশিং মেশিনের সর্বাধুনিক সব সুবিধা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা কাজ চলছে। খুব শিগগিরই আমরা শতভাগ ড্রায়ার ফিচার সমৃদ্ধ ওয়াশিং মেশিন ক্রেতাদের জন্য উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও স্বাচ্ছন্দ‌্যময় করা। মানুষের ঘরে ঘরে ওয়াশিং মেশিন পৌঁছে দেওয়া।

ওয়ালটন একটি ক্রেতাবান্ধব ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। বাজেটের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক ফিচারের আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহ করে সবার নজর কেড়েছে। কারণ পণ্যের মান নিয়ে ওয়ালটন কখনো আপস করে না। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্রেতাদের সর্বোচ্চ মানের পণ্য ও সেবা দিয়ে যেতে চাই।

সুজন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়