ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

প্রশান্তির জন্য ভ্রমণ করি: তানভীর অপু

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৩৪, ২৫ নভেম্বর ২০২০
প্রশান্তির জন্য ভ্রমণ করি: তানভীর অপু

তানভীর অপু। বিশ্ব পর্যটক তিনি। ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দেশে। ইতিমধ‌্যে  ঘুরেছেন ৬৮ দেশের ৮৫০টি শহর। বেশ কয়েক বছর ধরে ফিনল্যান্ডে থাকেন। নাগরিকত্বও পেয়েছেন দেশটির। বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হয়েছিলেন নবম শ্রেণিতে। বিকেএসপির হকি দলের খেলোয়াড়ও ছিলেন। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়েও হকি খেলেছেন কয়েক বছর। এই ফাঁকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পড়ার সময় চলে যান ফিনল্যান্ডে। সম্প্রতি ঢাকায় এসেছেন তিনি। এক আড্ডায় শুনিয়েছেন তার পর্যটক হয়ে ওঠার গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

রাইজিংবিডি: আপনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণ করার ইচ্ছেটা কীভাবে জাগলো?

তানভীর অপু:  ১৯৯৭ সালে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর তার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় আমি পাখি দেখতে যেতাম। নবাবগঞ্জ, পাবনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে গেছি। এসব জায়গায় পাখি দেখতে গিয়ে ভ্রমণের চিন্তা মাথায় আসে। ইনাম আল হকের অনুপ্রেরণায় ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে আমার ছোট ভাই বিশ্ব পর্যটক তারেক অনু একশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করে অনুপ্রাণিত করেছেন।

রাইজিংবিডি: মূল ভ্রমণ শুরু করেন কখন?

তানভীর অপু: ২০০৬ সালে আমি লেখাপড়ার জন্য ফিনল্যান্ডে যাই। বাংলাদেশ থেকে সেখানকার সংস্কৃতি আলাদা। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্রমণে প্রথম পা দিয়েছিলাম এস্তোনিয়া নামে ইস্ট ইউরোপের একটি দেশে। সেখানে জাহাজে করে গিয়েছিলাম। এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিম। এরপর জার্মানি, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, লিথেনেস্টাইন ও চেক রিপাবলিক ভ্রমণ করি। এ যাত্রায় নয়টি দেশ ভ্রমণ করি। এভাবেই শুরু। 

রাইজিংবিডি: এই যে প্রথম ৯টি দেশ ভ্রমণ করলেন, এরপরের লক্ষ্যটা কী ঠিক করলেন?

তানভীর অপু: ভ্রমণে যখন আমি মজা পেয়ে গেলাম, তখন চিন্তা করলাম গাড়িতে ভ্রমণ করা যায় কিনা। এরপর যেখানেই গিয়েছি আমি সড়কপথে যোগাযোগ করেছি। এভাবে গেলে আপনি যেখানে খুশি সেখানে নামতে পারবেন। ছবি ও ভিডিও নিতে পারবেন। সেসব এলাকার মানুষদের দেখতে পারবেন, সংস্কৃতি দেখতে পারবেন। প্রকৃতি উপভোগ করা যায়। প্রথম শেষ করি প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার। এভাবে গাড়ি করে আমরা চারজন করে প্রত্যেক বছর ভ্রমণ করতাম। 

রাইজিংবিডি: এই যে আপনি বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে, শহর থেকে শহরে যাচ্ছেন, একেক দেশের ভিন্নরকম সংস্কৃতি, এই যে বিভিন্ন কালচারের মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, সেই অভিজ্ঞতা কেমন?

তানভীর অপু: এটা অন্যরকম অনুভূতি। 

রাইজিংবিডি: আপনি বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, ইতিহাস জানতে পেরেছেন। আমাদের দেশের অনেকেই কিন্তু এসব নিয়ে কৌতূহল, তারা জানতে চায়। কিন্তু কোনো বইপুস্তক বা তথ্য পায় না। বাংলাদেশিদের জন্য কি এসব বিষয়ে বই লেখার ইচ্ছে আছে?

তানভীর অপু: হ্যাঁ, আমি একটা বই লিখেছি। ‘যাত্রা হলো শুরু’। কিছু ডকুমেন্ট করেছি। 

রাইজিংবিডি: বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ান। সেসব দেশে বাংলাদেশকে কীভাবে ব্র্যান্ডিং করেন? 

তানভীর অপু: আমি সবশেষ ভ্রমণ করেছি লাতিন আমেরিকা। অনেকেই জানতে চায় আমি কোথা থেকে এসেছি। তখন বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরি।

রাইজিংবিডি: আপনি ফিনল্যান্ড দিয়ে ভ্রমণ শুরু করেছিলেন। এখন প্রায় নয়শর কাছাকাছি শহর ভ্রমণ করেছেন। সামনে কোন দেশ ভ্রমণ করবেন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তানভীর অপু: আসলে আমি ভ্রমণ করি নিজের জন্য। যেমন আমি ইস্তাম্বুলে ৫ বার গেছি। স্টকহোমে ২০ বার, দিল্লিতি ৪বার গেছি।  জীবনের শেষদিন পর্ন্ত ভ্রমণ করতে চাই। চলতি পথে আমি মারা যেতে চাই। আমি পৃথিবীর ৬ মহাদেশ ঘুরেছি। পৃথিবীর যত মহাসাগর রয়েছে সব দেখেছি।

রাইজিংবিডি: ভ্রমণের পেছনের রহস্য কী? 

তানভীর অপু: আমার কাছে পৃথিবীটাই একটি দেশ। আমরা মানুষ, এটাকে ভাগ করেছি। এজন্য বিভিন্ন দেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ধরুন ৬৪ জেলা, আমাদের উচিত প্রতিটি জেলায় ভ্রমণ করা। আমাদের ভাষা বাংলা হলেও প্রতিটি জেলার ভাষার আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। খুলনায় সুন্দরবন আছে, সিলেটে আছে চা বাগান।  সব দেখা উচিত। যখন ভ্রমণ শুরু করেছি, ভেবেছি পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে আমি পা রাখব।

রাইজিংবিডি: কেন ভ্রমণ করেন?

তানভীর অপু: জীবনটা ছোট, এটি উপভোগ করা প্রয়োজন। জীবন নিয়ে আমার গভীর কোনো বোধ নেই। আমি কেবল জীবনকে উদযাপন করতে চাই। আমি যখন কোনো দেশে যাই কিংবা কোনো শহরে যাই, তখন সেখানকার মানুষ দেখে আমি  অভিজ্ঞতা নিই। কারণ মানুষের টাকা-পয়সা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা কিংবা জীবন দর্শন চিরস্থায়ী। এটা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। পৃথিবী ঘুরে দেখার কোনো বিকল্প নেই। প্রশান্তির জন্য ভ্রমণ করি।

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশের মানুষও এখন অনেক ভ্রমণ করছে। তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

তানভীর অপু: আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, আপনি আপনার পাশের জেলা ভ্রমণ করুন। নিজের দেশটা আগে ঘুরে দেখুন। তারপর আপনার সামর্থ‌্য হলে পাশের দেশ ঘুরুন। এভাবে বিশ্ব ভ্রমণ করুন। 

রাইজিংবিডি: আপনি যে ভ্রমণ করেন এই বিষয়টি মানুষকে জানানো দরকার। বিশেষ করে আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকেই ভ্রমণ করতে পারেন- এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

তানভীর অপু: আমি জানাচ্ছি। আমার ফেসবুক পেজে (Travel With Tanvir Opu) নিয়মিত লেখা ও ইউটিউবে (Travel With Tanvir Opu) নিয়মিত ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।  স্কুলের বাচ্চাদের ভ্রমণ সম্পর্কে জানানোর জন্য সেমিনার করছি। আমি মনে করি, একমাত্র ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। 

রাইজিংবিডি: ভ্রমণ নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

 তানভীর অপু: স্বপ্ন দেখি, তরুণ প্রজন্মের ১০টি ছেলে-মেয়েকে ভ্রমণের জন্য তৈরি করবো।  তারা ভ্রমণ করবে। অন্যদের সচেতন করবে। এমনি করে একদিন আগামী প্রজন্ম ভ্রমণের প্রতি মন-মানসিকতা তৈরি করবে।

রাইজিংবিডি: সময় দেওয়ার জন‌্য আপনাকে ধন‌্যবাদ।

তানভীর অপু: আপনাকেও ধন‌্যবাদ। রাইজিংবিডির পাঠকদের শুভেচ্ছা।

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়