ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কাজ শেষ না হতেই ৬২ কোটি টাকার সড়কে গর্ত

মাগুরা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ২৩ অক্টোবর ২০২০  
কাজ শেষ না হতেই ৬২ কোটি টাকার সড়কে গর্ত

মাগুরায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিয়মান প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের মহাসড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই কিছু অংশে ফাটল ও গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শহরের পিটিআই এলাকায় গর্ত তৈরি হওয়ায় কিছু অংশে সংস্কার করতে হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ শেষ না হতেই এ ধরনের সংস্কারের হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্যদিকে ভূমি অধিগ্রহণে বেশি দামের দাবিতে সৈয়দ নাজমুল হক নামে একজনের মামলায় এ মহাসড়কের ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড ও পারনান্দুয়ালী এলাকার কিছু অংশের স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এ কারণে সম্পূর্ণ কাজটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মাগুরা সড়ক ও জনপথের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়, ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পুলিশ লাইনস থেকে রামনগর এলাকা পর্যন্ত মোট ৮.১৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে যুব উন্নয়ন অফিস এলাকা থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনের এবং বাকি অংশ ২ লেনের।

এরমধ্যে ৪.১৫ দৈর্ঘ্যের ২ লেনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।পাশাপাশি পুরোপুরি শেষ হয়েছে শহরের মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস এলাকা থেকে ভায়না এলাকা পর্যন্ত ৪ লেন সড়কের অংশের কাজ। এছাড়া ৪ লেনের বাকি অংশের মধ্যে শেষ হয়েছে ভায়না থেকে পুলিশ লাইনস ও যুব উন্নয়ন-কুছুন্দি ইউনিয়ন অফিস পর্যন্ত এলাকার কাজ। কাজের দায়িত্বে রয়েছে এম এম বিল্ডার্স ও এ এস কনস্ট্রাকশন নামে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল জুন ২০১৯। নানা জটিলতায় কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়ানো হয় হলেও কাজের মেয়াদ।

৪ লেনের যেটুকু কাজ শেষ হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দাবি করছে এরমধ্যে শহরের পিটিআই এলাকায় সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কিছু অংশ জুড়ে ইতোমধ্যে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এছাড়া ভায়না এলাকায় ডিভাইডারের একটি অংশ ভেঙে গেছে। স্থানীয় সাইফুল হোসেনসহ অনেকে জানান, কাজ শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যে অন্তত ১৫ স্থানে এ গর্ত ও ফাটল বর্তমান রয়েছে। যার ওপর দিয়েই চলেছে যানবাহন।

মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিটুমিনের তারতম্যের কারণে নতুন সড়কে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষত অংশ নতুন করে কেটে পুনরায় বিটুমিন দিয়ে উপযোগী করতে হবে। ডিভাইডার রক্ষার জন্য রেলিং ও লোহার পাতের বেস্টনি দেওয়া হচ্ছে’।

এদিকে একইদিন বিকেলে শহরের পিটিআই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান সেখানে তড়িঘড়ি করে সংস্কারের করার জন্য নষ্ট হওয়া রাস্তা কাটার কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে শহরের মোল্যাপাড়ার শিমুল হোসেন বলেন, ‘এত টাকার মহাসড়ক উন্নয়ন শেষ না হতেই নষ্ট হয়ে যাওয়া অত্যন্ত লজ্জার। কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ এ ক্ষেত্রে তাদের দায় এড়াতে পারে না’।

এদিকে সড়কের নির্মণের এ দূরাবস্থা পাশাপাশি তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ৪ লেনের মধ্যে একতা কাঁচা বাজার এলাকা থেকে পারনান্দুয়ালীর কিছু অংশে নির্মাণ কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। শুরু না হওয়া ১.৯২ কিলোমিটার সড়কের বিষয়ে জানা গেছে সৈয়দ নাজমুল হক নামে শহরের ঢাকা রোড এলাকার এক ভূমি মালিক জমির উচ্চ মূল্য দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন।এ কারণে আদালতের স্থগিতাদেশে ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। একই জাতীয় অভিযোগে বন্ধ রয়েছে পারনান্দুয়ালী এলাকার কিছু অংশের কাজ। এ কারণে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৪ লেনের পুরো কাজ যথাসময়ে না শেষ হবার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

মাগুরা সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম সার্বিক প্রসঙ্গে বলেন, ‘৪ লেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। মোট বরাদ্দ হওয়া ৬২ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। কোনো স্থানে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা জটিলতা দ্রুত নিরসন হয়ে গেলে চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তা না হলে যথাসময়ে কাজ শেষ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে’।

এ বিষয়ে ৪ লেন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ এস কনস্ট্রাকশনের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বিটুমিনের বেশী হওয়ায় পিটিআই এলাকার কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি কেটে আবার নতুন করা হচ্ছে। এছাড়া সড়ক নির্মাণ কাজের মান যথাযথ রয়েছে’।

মাগুরা/এসএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়