ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাঁধের ঝুপড়ি এখন শেষ আশ্রয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১১ জুন ২০২১  
বাঁধের ঝুপড়ি এখন শেষ আশ্রয়

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সর্বশান্ত খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশির তপন মন্ডল। বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ঘর জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। সব হারিয়ে তিনি আশ্রয় নেন কাঁকড়া ধরা নৌকায়। ৫ দিন সেখানেই ছিলেন। এরপর তার ঠাঁই হয় বেড়িবাঁধের একটি ঝুপড়ি ঘরে।

তপন মন্ডল কোনোমতে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছেন কিন্তু উপার্জনের এখনও কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। তপন বলেন, সংসার চলতো দিনমজুরি করে। মাঝেমধ্যে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতাম। এখন সব বন্ধ। সুন্দরবনে যাওয়া নিষেধ। দিনমজুরের কাজও জুটছে না।

এই পরিস্থিতিতে তপন একা নন। অলোকা রানী, শেফালী রানীরাও ইয়াসে সর্বস্ব হারিয়েছেন। তাদের মতো অনেকেই সব হারিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। ঝুপড়িঘর এখন তাদের আশ্রয়স্থল। এ প্রসঙ্গে অলোকা রানী বলেন, যেটুকু জায়গা ছিল এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ভেসে গেছে। কয়দিন আগে তিনকাঠা জমি কিনে ঘর বানানো শুরু করেছিলাম। সেই ঘরে এক রাতও থাকতে পারিনি। সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এ বারের জলোচ্ছ্বাসে।

হরিহরপুর গ্রামের বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া শেফালী দাস সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে মুহূর্তে ঘরে পানি চলে আসে। তাড়াহুড়ো করে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। চোখের সামনে ঘরটা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গাতিরঘেরী বাঁধের ভয়াবহ অবস্থার বিষয়টি গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তারা সময়মত পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে এলাকার মানুষের আজ এই করুণ দশা!

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে যারা ঘর-বাড়ি হারিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। পাউবো সূত্র জানিয়েছে, বাঁধ দুটির উচ্চতা হবে বর্তমান বেড়িবাঁধের উচ্চতার চেয়ে ২ ফুট বেশি। এ ব্যাপারে পাউবোর আমাদি উপ-বিভাগের সেকশন কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদিন বলেন, জাইকার অর্থায়নে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত গাতিরঘেরীর ১২শ’ মিটার বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দশালিয়া বাঁধের কাজও তাড়াতাড়ি শুরু করবে জাইকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে গাতিরঘেরী, আংটিহারা, মঠবাড়ি, দশালিয়া, পদ্মপুকুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪টি ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রাম লোনা পানিতে প্লাবিত হয়। এতে মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর, ক্ষেত খামার, রাস্তাঘাট তলিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। 
 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়