ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আপনেরা আমার এইটুক দ্যাখপেন না যে আমি একটা মেয়ে’ 

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১৮ জুন ২০২১  
‘আপনেরা আমার এইটুক দ্যাখপেন না যে আমি একটা মেয়ে’ 

‘আমি এহন কহানে যাব? বাচ্চাডারে নিয়ে রাত্রিরি কহানে থাকব? আপনেরা আমার এইটুক দ্যাখপেন না যে আমি একটা মেয়ে। আমি তো ছাওয়াল না যে রাস্তায় ঘুমাব! আমার কি কোনো ঘর হবি না?’

প্রায় বিলাপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন রহিমা বেগম (২৮)। উলঙ্গ দেড় বছরের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজছেন তিনি। কিন্তু কোনো আশ্রয় না-পেয়ে মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তার কথাগুলো আশপাশের অনেকেই শুনছিলেন কিন্তু কেউই সাড়া দিচ্ছিলেন না। ফলে আরো বেশি বিপন্ন বোধ করছিলেন তিনি।

কথাপ্রসঙ্গে জানা যায় রহিমা বেগমের পৈত্রিক ঠিকানা মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার তেলিপুকুর গ্রামে। পিতা আলীম শেখ। তিনি মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। মা-ও জীবিত নেই। স্বামী জীবিত আছেন, কিন্তু তিনি রহিমাকে ঘরে তুলতে রাজি নন। যে কারণে স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীকে আশ্রয়ের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে।

‘বাপের একখান ঘর নাই যে সেই জায়গায় যায়ে ওঠব। তালি আমি এহন কী করব? আমি তো এই জায়গার মায়ে।’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে রহিমা বলেন, ‘আমি বাচ্চাটারে নিয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকতিছি- কেউ দ্যাহে না। হাসপাতালের বারান্দায় বাচ্চাটারে খালি কাপড়ে নিয়ে শুয়ে রইছি- স্বামী  খোঁজও নেয় না। কিছু কলি, মারধর করে, অত্যাচার করে। আমি এহন কহানে যাব?’

চার বছর আগে নেত্রকোনা থেকে মহম্মদপুরে শ্রমিকের কাজ করতে আসেন আজিজুল শেখ। তার সঙ্গেই রহিমার বিয়ে হয়। কোলে সন্তান আসে। হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে স্ত্রী-সন্তান রেখে আজিজুল উধাও হয়ে যান। অনেক কষ্টে স্বামীর দেখা পান রহিমা। কিন্তু অসহায় এই নারীর ভাষ্যমতে, রহিমাকে ঘরে নিতে তার এখন বেজায় আপত্তি। 

এদিকে তেলিপুকুর গ্রামে বাবার সামান্য জমি রহিমার দুই ভাইয়ের দখলে। সেখানেও ঠাঁই নাই। সেখানে গেলে ভাইয়েরা মারধর করেন বলে রহিমা জানান। নিরুপায় হয়ে পথে পথে ঘুরছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, ‘রহিমা বেগম আমার কাছে এসেছিলেন। তার নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রণিত তালিকায় তার নাম আছে।’

শাহীন/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়