ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অপারেশনের ২০ বছর পর রোগীর পেটে মিললো লিডিল হোল্ডার

মেহেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৪ জানুয়ারি ২০২২  
অপারেশনের ২০ বছর পর রোগীর পেটে মিললো লিডিল হোল্ডার

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় রাজা ক্লিনিকে অপারেশনের দীর্ঘ দুই দশক পর রোগীর পেট থেকে মিলেছে স্টিলের লিডিল হোল্ডার। ২০ বছর আগে রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করেন বাচেনা খাতুন (৫০)। কিন্তু এরপরও সুস্থ হতে পারেননি তিনি। তাই পেটের ব্যথায় বাচেনা খাতুন বছরের পর বছর ছুটেছেন ডাক্তারের কাছে। এতে খুইয়েছেন অর্থ সম্পদ। অবশেষে কুড়ি বছর পর তার পেটে মিললো ডাক্তারের রেখে দেওয়া লিডিল হোল্ডার। 

বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী। চিকিৎসকের রেখে দেওয়া অপারেশনে ব্যবহৃত লিডিল হোল্ডার তাকে অসুস্থ করে। চিকিৎসকের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে দীর্ঘ কুড়ি বছর। 

পেটের মধ্যে লিডিল হোল্ডার সত্যতা নিশ্চিত করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিম আহমেদ রনি। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গৃহবধূ বাচেনা খাতুন আমার কাছে ডায়াবেটিক ও মাজার ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসেন। আমি তাকে এক্সরে করতে বলি। তিনি রাজশাহীর একটি ডায়াগনিস্ট সেন্টারে এক্সরে করেন। রিপোর্টে স্টিলের লিডিল হোল্ডার দেখা গেছে। আমি তাকে ও তার স্বামীকে পরামর্শ দেয় রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হতে অথবা অন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে সেটা বের করে নিতে।’

২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন বাচেনা খাতুন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার স্মরণাপন্ন হলে বাচেনা খাতুনকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন। অপারেশনের চুক্তি করেন বাচেনা খাতুনের পরিবার। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করেন প্রতিবন্ধী স্বামী আব্দুল হামিদ। ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও এ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন করে ছুটি দেওয়া হয়। অপারেশন করানো হলেও বাচেনা খাতুনের অসুস্থতা দিনদিন বাড়তে থাকে। পুনরায় ডা. রাজার স্মরণাপন্ন হলে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরৎ পাঠান তিনি। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেয়ে বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। অবশেষে দ্বিতীয়বার ডাক্তার রাজার সঙ্গে দেখা করেও লাভ হয়নি। সুস্থতার জন্য এরপর বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন। 

কয়েকদিন আগে স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে বাচেনা খাতুনকে এক্সরে করানো হয়। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৩/৪ ইঞ্চির লিডিল হোল্ডারের সন্ধান মেলে। 

বাচেনা খাতুন বলেন, ‘আমি ২০ বছর আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করি। অপারেশনের পর দুটি পাথর পাওয়া যায়। কিন্তু এরপর পেটের ব্যথা দিনদিন বাড়তেই থাকে।’ 

স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘গত রোববার (২ জানুয়ারি) আমার স্ত্রীকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরদিন (৩ জানুয়ারি) সেখানে এক্সরে স্ত্রীর পেটের মধ্যে লিডিল হোল্ডার মিলেছে। আমি কী দিয়ে তার অপারেশন করাবো। আমার আর কিছু নেই। কার কাছে গেলে সহযোগিতা পাবো তাও জানি না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, ‘আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। তারপরও ডাক্তার মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো ডাক্তার ছিলেন। তিনি ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করতেন। তখন আমার ক্লিনিকে সব অপারেশন তিনি করতেন। তিনি ভুলটা করতে পারেন। মেহেরপুরে চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে  আমার পরিচয় ছিল। হয়তো বা এটি তার অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। তবুও ২০ বছর বাচেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেবো।’ 

অপাবেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তিনি ২০০১ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি অবসর নিয়ে নিজ এলাকা খুলনাতে আছেন বলে জানা গেছে। 
 

মহাসিন/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়