ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে বদলে যাবে মাগুরা 

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২৫ জুন ২০২২  
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে বদলে যাবে মাগুরা 

মাগুরা জেলার অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি মাগুরা টেক্সটাইল মিলস দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।  কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জেলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা। জেলার অর্ধেকের বেশি মানুষের বসবাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। কর্মসংস্থানই এখানকার বড় সংকট।

 এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়া নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন দক্ষিণের এ জেলার বাসিন্দারা। সেতুর ফলে কৃষিপণ্য পরিবহনে ইতিবাচক পরিবর্তন তো আসবেই, এর পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার আশা করছেন মাগুরাবাসী। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে পদ্মা সেতুর সুবিধা নিয়ে বদলে যাবে মাগুরা। 

 মাগুরায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চলছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মাগুরার সঙ্গে দেশের অন্য জেলার সড়ক যোগাযোগ বরাবরই ভালো। শিগগিরই রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে মাগুরা। গত বছর মধুখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আাসবে নতুন গতি।

সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এসব ইকোনমি জোনের কারণে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চালু হতে যাওয়া এসব ইকোনমি জনের মধ্যে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে মাগুরা। এখানে কৃষি অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের আয় ও ব্যয় খানা জরিপ এবং দারিদ্র্য মানচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাগুরা জেলার অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এই জেলার ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। ২০১০ সালের দারিদ্র্যের মানচিত্রে মাগুরার দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে মাগুরায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ও শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুরে প্রস্তাবিত জমি সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ২০০ থেকে ৩০০ একর জমি এ প্রকল্পের জন্য দেওয়া সম্ভব হবে। 

প্রকল্পের সুবিধা হিসেবে বলা হচ্ছে, মাগুরা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে যশোর বিমানবন্দর। ১৫০ কিলোমিটার দূরে মোংলা এবং ২৭০ কিলোমিটার দূরে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। বেনাপোল ও দর্শনা স্থলবন্দর ৯০ কিলোমিটার দূরে। প্রকল্পের সঙ্গে সড়ক, নৌ ও রেলসংযোগ তৈরি হচ্ছে। আর এখন পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রামের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হয়ে গেল।

গত সপ্তাহে মাগুরা ঘুরে গেছেন বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। 

সে সময় ইউসুফ হারুন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে, যেখানে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে মাগুরা। এখানে কৃষি অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়। আমি চেষ্টা করব সহযোগিতা করার। ‘

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা গেলে মাগুরায় কর্মসংস্থান হয়ে যাবে। এটা মাগুরার মানুষের প্রাণের দাবি। আমরা এটার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছি। সংসদে কথা বলেছি। আমাদের সামাজিক একটা সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। তবে মানুষের কর্মসংস্থান দিতে না পারলে পরিবেশ সুন্দর রাখা সম্ভব হবে না।’

মাগুরা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘রেললাইন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে মাগুরার আমূল পরিবর্তন হবে। এটা ছাড়া আমাদের অর্থনীতি এগোনো খুব কঠিন। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য একটা আশীর্বাদ হতে পারে, যদি শিল্পোদ্যোক্তাদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারি।’

মাগুরার জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, ‘এই জেলায় বিসিকও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইকোনমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) ও বিসিক দুটি নিয়েই কাজ চলছে। তবে বেশি জোর দিচ্ছেন ইকোনমিক জোনের দিকে। সরকার চাইলে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এটা বাস্তবায়িত হতে পারে। জেলা প্রশাসন ও বেজা যৌথভাবে কাজ করেছে। সামনের অনেকগুলো ধাপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রশাসনিক অনুমোদন। সেটা পেলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।’

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়