ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

জাল টাকায় জাল ফেলেছে গোয়েন্দারা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাল টাকায় জাল ফেলেছে গোয়েন্দারা

মাকসুদুর রহমান: জাল টাকা। দেখতে হুবুহু আসল টাকার মতো হলেও এর নেই কোন বৈধতা। তারপরও গোপনে এ টাকা তৈরি করছে প্রতারক চক্রগুলো। প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে তাদের পাকড়াও করতে এবার জোরালোভাবে রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় জাল ফেলেছে গোয়েন্দারা।

বুধবার কথা হয় গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঈদ বা বড় বড় উৎসব গুলোতে জাল টাকা প্রস্তুতকারক ও কারবারীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। এরিমধ্যে বেশ কিছু কারবারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আগাম তথ্য থাকায়। আরো কয়েকটি চক্রের তথ্যও আছে। যারা ঢাকায় অবস্থানও করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেজন্য শুধু ঢাকায়ই নয়, অভিঙ্গতার আলোকে কয়েকটি জেলাতেও গোয়েন্দারা কাজ করছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, ডিবি পুলিশ, সিআইডি সমন্বয় করে কাজ করছে। এদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটও সহযোগিতা করছে।’

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সাদা পোশাকে এসব গোয়েন্দারা বিভিন্নস্থানে সার্বক্ষণিক জালের মতো ছড়িয়ে আছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে আছেন। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। অতীতে যারা এ ব্যবসা করেছে মূলত তাদের সূত্র ধরেই অভিযানও চলছে বিভিন্নস্থানে। আগাম এমন তথ্যেই চলতি সপ্তাহে ঢাকার রামপুরার উলন রোডের একটি বাড়িতে জাল টাকার কারখানার সন্ধান মেলে। এখান থেকে প্রতিদিন  ১ হাজার  ও ৫০০ টাকার জাল নোটের ৩ থেকে ৪ লাখ জাল টাকা তৈরি হতো। বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও সরঞ্জামাদিসহ চক্রের প্রধান নাজমুল হোসেন নিজামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে কামরাঙ্গীরচর থানার পূর্ব রসুলপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে ৪৬ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজন গ্রেপ্তার হয়। গত সপ্তাহে হাতিরঝিল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৭ লাখ জাল টাকাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জাল টাকা তৈরিকারী চক্রের এক সদস্যের এক সদস্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রতি একশ পিস ১ হাজার টাকার নোট অর্থাৎ ১ লাখ টাকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। সেই টাকা আবার ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এভাবে বিভিন্নজনের কাছে বাড়তি দামে জাল টাকা বিক্রি করা হয়। আমি নিজেই ১৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। গ্রেপ্তার হয়েছি ৫ বার।’

উৎপাদকের এক লাখ টাকা তৈরি করতে খরচ হয় সাত থেকে ১০ হাজার টাকা। তারা পাইকারি বিক্রেতার কাছে ১ লাখ টাকা ১৪-১৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করে। পাইকারি বিক্রেতা ১ম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা, ১ম খুচরা বিক্রেতা ২য় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকায় এবং ২য় খুচরা বিক্রেতা মাঠ পর্যায়ে সেই টাকা আসল এক লাখ টাকায় বিক্রয় করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক হাজার টাকার মতো বড় নোটই জাল হয় বেশি। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে ছাপানো এসব জাল টাকা মানুষের হাত ঘুরে চলে আসে, নগদ লেনদেনের সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারেও। ঈদ এলেই তাদের সিন্ডিকেট সারাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে জাল নোটের কারবারী করছে বেশ কিছু অসাধু চক্র। এ সিন্ডিকেটে নারী সদস্যও রয়েছে। প্রতিটি স্তরেই ওই সিন্ডিকেটের নারী সদস্য সক্রিয় রয়েছে। কখনো গৃহিণী, কখনো কলেজছাত্রী সেজে জাল টাকা বহন করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। পণ্য কেনাকাটা করে মার্কেটে জাল টাকার বিস্তার ঘটানো হয়।

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, রাজধানীতে কমপক্ষে ১৫টি জাল নোট সরবরাহকারী চক্র এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন নোট ছাড় করা হয় এই সময়। আর এ সুযোগকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। কয়েক ভাগ হয়ে এসব চক্রের সদস্যরা বাজারে জাল নোট লেনদেনে কাজ করে থাকে।

প্রথম জাল নোট তৈরি শুরু করে মামুন নামে এক ব্যবসায়ী। সে মূলত টিস্যু পেপার ব্যবসায়ী ছিল। ওই ব্যবসায়ে লোকসান দেওয়ার পর জাল নোট তৈরির ব্যবসা শুরু করে সে। তার সহকারী হিসেবে জাল নোট তৈরির পুরো প্রক্রিয়া রপ্ত করে নয়াবাজারের আব্দুর রহিম শেখ ও কামরাঙ্গীরচরের আব্দুল মালেক ওরফে মালেক মাস্টার। এদের সহযোগী হিসেবে এখন কাজ করছে কামাল মাস্টার, হুমায়ুন মাস্টার, আলাউদ্দিন মাস্টার, আজিজ মাস্টার ও জাকির মাস্টার।

কেন্দ্রিয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, আইনের দুর্বলতা নিয়ে দেশে জাল নোটের বিস্তার ঘটছে। জাল নোট প্রতিরোধে অর্থদন্ড ও সর্বোচ্চ ১২ বছরের জেল বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রেখে একটি আইন করার চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে এদের দৌরাত্ম অনেকটাই কমে আসবে বলে সূত্রটি মনে করে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৯/মাকসুদ/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়