ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জঙ্গি বাবা সম্পর্কে আদালতে যা বলল ছেলে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জঙ্গি বাবা সম্পর্কে আদালতে যা বলল ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় জেএমবির অন্যতম সমন্বয়ক তানভীর কাদেরির ছেলেসহ ৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আগামী ২৩ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

এদিকে জেরার পর্যাপ্ত সুযোগ না দেয়ার অভিযোগ করে ৩ আসামির আইনজীবী মামলা থেকে ওকালতনামা প্রত্যাহার করেছেন।  ফলে এদিন সাক্ষীদের জবানবন্দির পর জেরা হয়নি।

মঙ্গলবার হলি আর্টিজান মামলায় বাবার জঙ্গী কার্যক্রম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন তানভীর কাদেরির দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে।  আজিমপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান মামলায় সে তার মায়ের সঙ্গে আসামি।

জবানবন্দিতে ওই কিশোর বলে, “তাদের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৪ জন। বাবা (তানভীর কাদেরী), মা (আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা) আর আমরা দুই ভাই। ২০১৪ সালের দিকে আমার পরিবারসহ চারজন শেলটেক বসবাস করতাম। প্রতিদিনের মত লাইফ স্কুলের মসজিদে বাবাসহ আমি নামাজ আদায় করতাম।”

তারপর ওই কিশোর প্রাত্যহিক রুটিনের বাইরে তার বাবার ভিন্নচিন্তা শুরু হওয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, একদিন আব্বু বাসায় এসে আম্মুকে বলেন, “আমরা সহপরিবারে হিযরত করব। এখানে তেমন কোন পরিবেশ নেই, ভাল স্কুল নেই। হিযরতে ইসলামের পথে গেলে আর কোন প্রকার কষ্ট থাকবেনা। এরই মধ্যে আব্বুর জাহিদ নামের এক আঙ্কেলের সাথে পরিচিত হয়। এ বিষয়ে আঙ্কেলের সাথে আব্বু আলোচনা করেন। আমাদের সকলকে ইসলামের বায়াত গ্রহণ করতে হবে। আব্বু আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলে হা মত প্রকাশ করেন। এরপর আব্বুর কথামত ব্যাগ গুছাতে থাকি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান, সপরিবার মায়লেশিয়ায় ঘুরতে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করবেন। এরপর পল্লবীর দিকে বাবা আমাদের বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে জাহিদ আঙ্কেলের সাথে আরও তিনজন আমাদের বাসায় আসেন। ওদের মধ্যে এক আঙ্কেলের আমাকে চকলেট খেতে  দেয়। তারা আমাদের পেনড্রাইভ থেকে একটি ’ইসলামিক’ ফোল্ডার দিয়ে যায়। ওই সময় মুসা নামের আরেক আঙ্কেল আমাকে আর আমার ভাইকে ইংরেজী ও বাংলা পড়াতে আসতো। কিছু দিন পর চকলেট আঙ্কেল বলে, বসুন্ধরায় বাসা ভাড়া নিতে। চকলেট আঙ্কেলের বাসা দেখে এসে পরে সবাই মিলে ওই বাসায় উঠি। কয়েকদিন যাওয়ার পর ওই তিন জন আরও ২ জনকে বাসায় নিয়ে আসে। তাদের একটি সংগঠন ছিল। সাংগঠনিকদের নাম ছিলো, আছাদ, মাসুম, ওমর, আরিফ। এরপরে আরও তিন জন আসেন। জাহাঙ্গীর নামের আরেক আঙ্কেল তার পরিবার নিয়ে আসেন। জাহাঙ্গীর আর বাবা এক সাথে থাকতেন। তামিম নামের আরেক  আঙ্কেল রুমে সাতজন থাকতো। তাদের রুমে ঢোকা নিষেধ ছিল। ওই সাতজন সব সময় রুমে থাকতো। মাঝে মাঝে আব্বুকে তামিল দিত। আমি আর আব্বু ওদের রুমে খাবার দিয়ে আসতাম বাহিরে থেকে। একদিন চকলেট আংকেল ৫টি ব্যাগ নিয়ে আসে। ওই গুলো তালিমের রুমে রেখে চলে যান।”

দশম শ্রেণির ওই ছাত্র আরো জানায়, এর কিছু দিন পরে সারোয়ার নামের আরেকজন এসে আলোচনা করে চলে যান। তিনদিন পর জাহাঙ্গীর আঙ্কেল এসে শিরিস কাগজ দিয়ে চাপাদিতে ধার দিতে থাকেন। আম্মু জিজ্ঞাসা করলে তখন বলেন, ওই গুলো অপারেশনের জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে। এরপর তিনজন বাইক নিয়ে বাহিরে চলে যান। তার কয়েক মিনিট পরে আরও দুইজন বাহির হয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায় ওপারে জান্নাতে দেখা হবে। তারপর আব্বুকে বলে দ্রুত বাসা ছেড়ে মিরপুরের দিকে চলে যান। এরপর আব্বু আম্মুকে বলে, আমি ট্যাক্সি আনতে যাচ্ছি, তুমি ব্যাগ গুছিয়ে নাও। আব্বু ট্যাক্সি নিয়ে আসলে আমরা এ বাসা ছেড়ে চলে যাই।

সে আরও জানায়, এরপরে এক আঙ্কেল জানান, একটি বড় অপারেশন হয়েছে। আব্বু তখন বিডিনিউজ খবরে দেখতে পান, হলি আর্টিজানে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। সেইদিন যারা বাসা থেকে বাহির হয়ে গেছেন তারা সকলে মারা গেছেন। কয়েকদিন পর আরেক আঙ্কেল রূপনগরে বাসাভাড়া নিতে বলেন। এরপর আমাকে আর আম্মুকে আজিমপুরে পাঠিয়ে দেয়। আব্বু আর ভাইয়া অন্য জায়গায় চলে যায়। আজিমপুরে থাকা অবস্থায় দুইজন মহিলা আসেন বাচ্চা সহকারে। জাহিদ আঙ্কেল উনাদের নিয়ে আসেন। পরে জানতে পারি, পুলিশের অভিযানে বাবা ও ভাইয়ে মৃত্যু হয়। আমাদের আজিমপুরের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখানে আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আর আম্মু হালকা আঘাত পান।

এরপর বিচারক জিজ্ঞসা করেন, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের মধ্যে কাউকে চিনেন কিনা- উত্তরে দুইজনকে চিনে বলে বিচারককে জানান। বলেন, আমরা যখন বসুন্ধরায় থাকতাম তখন র‌্যাশ আংকেল ওরফে আসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব আসত।

আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দি শেষ হওয়ার পর আসামি আসলাম, রিগ্যান ও খালেদের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ এ সাক্ষীকে জেরা কয়েকটি প্রশ্ন করার পর আজিমপুরে জঙ্গী আস্তানার মামলায় সে আসামি হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করতে গেলে বিচারক অপ্রাসঙ্গিক বলে বাধা দেয়। তখন বিচারক ও এ আইনজীবীর মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আইনজীবী ফারুক ওকালতনামা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করেন। এরপর বিচারক ৩০ মিনিটের জন্য এজলাস ত্যাগ করেন। পরে আবার এসে ফাইরুজ মালিহা নামে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর ওই ৩ আসামিকে এ সাক্ষীকে জেরা করার কথা বললে, তারা আইনজীবী নিয়োগ করে জেরা করবে বলে জানালে বিচারক পরবর্তী ধার্য তারিখে ওই সাক্ষীকে আসতে বলেন। এরপর আলম চৌধুরী নামে আরেক সাক্ষীর আংশিক জবানবন্দির পর বিচারক আগামী ২৩ জুলাই পরবর্তী সাক্ষীর দিন ধার্য করেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৯/মামুন খান/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়