ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাগিরা খুনের নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০১, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাগিরা খুনের নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

ছিনতাইকারীর হাতে খুন হয়েছেন সিদ্ধেশ্বরীর সাগিরা মোর্শেদ। এই ভেবে বিচারের আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন নিহতের স্বজনেরা। কিন্তু তাকে যে পারিবারিক দ্বন্দ্বে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে তা ৩০ বছর পর উদঘাটন করেছে পুলিশ।

চলতি বছরের ১৭ জুলাই থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত শুরু করে। গ্রেপ্তার করা হয় সাগিরার ভাসুর হাসান আলী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনসহ চার জনকে। তারা ইতোমধ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আদালতে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানান, সাগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস ছালাম চৌধুরী তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তার বড় ভাই সামছুল আলম চৌধুরী ও মেজ ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী। সাগিরার সঙ্গে আব্দুস ছালাম চৌধুরীর বিয়ে হয় ১৯৭৯ সালে। পরের বছর শিক্ষকতা করার জন্য সপরিবারে ইরাকে চলে যান আব্দুস ছালাম।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে ১৯৮৪ সালে সপরিবারে দেশে ফিরে রাজারবাগ পেট্রল পাম্পের পাশে পৈতৃক ভিটায় গড়ে তোলা দোতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তারা। মেজ ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী বারডেম হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৮০ সালে সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিনকে বিয়ে করেন। ওই বছরেই স্ত্রীকে নিয়ে লিবিয়ায় চলে যান ডা. হাসান আলী চৌধুরী।

১৯৮৫ সালে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে এসে রাজারবাগে বাবার বাসায় তার মা, বড় ভাই সামসুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে নিচতলায় একসঙ্গে কিছুদিন বসবাস করেন। এরপর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ছোট ভাই আ. ছালাম চৌধুরীর বাসার একটি রুমে থাকতে শুরু করেন ডা. হাসান আলী চৌধুরী।

এ সময় ডা. হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদার সঙ্গে ছোট ভাই আ. ছালাম চৌধুরীর স্ত্রী সাগিরার দ্বন্দ্বের শুরু হয়। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে ওই বাড়ির তৃতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হলে ডা. হাসান আলী চৌধুরী তার পরিবার নিয়ে তিনতলায় বসবাস শুরু করেন।

তৃতীয় তলা থেকে ময়লা ফেলা ও বিভিন্ন কারণে ডা. হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদার সঙ্গে সাগিরা মোর্শেদের দ্বন্দ্ব হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে সাগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা। এরপর তারা মারুফ রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

মারুফ রেজা তৎকালীন সময়ে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার নামকরা সন্ত্রাসী ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার জন্য ডা. হাসান আলী চৌধুরী ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন মারুফ রেজার সঙ্গে। ডা. হাসান আলী চৌধুরী শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজওয়ানকে মারুফ রেজার সহযোগী হিসেবে নিয়োগ করেন। যাতে সে সাগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দিতে পারে।

সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি তদন্ত করে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক এবিএম সুলতান আহম্মেদ। এক বছরের তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়ে ওই তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকারীরা সাগিরা মোর্শেদের পথরোধ করে তার হাতে থাকা সোনার বালা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বালা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছিনতাইকারী মন্টু তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত মন্টুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালে ছয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামি মারুফ রেজার নাম আসায় আদালতের এপিপি মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এরপরই মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।

ঘটনা উদঘাটনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, ভুক্তভোগি সদস্যদের তথ্য, ঘটনার আশপাশে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবদ এবং সেই সময়ের আলামত সংগ্রহ করে আমরা একটি ধারণা পাই। এরপর কিছু দালিলিক কাগজও আমাদের হাতে আসে। নিশ্চিত হই সাগিরার স্বজনেরাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এরপর ওই চার জনকে আটক করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনা স্বীকার করে। এখন ভাড়াটে খুনি কারা তাদের খুঁজে বের করা হবে। তারপর আবার এটি অনেক আগের ঘটনা। তদন্ত করে শিগগিরই একটি চার্জশিট দেয়া হবে ন্যায়-বিচারের স্বার্থে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে ভিকারুননেসা স্কুলে মেয়েকে আনতে গিয়ে খুন হন সাগিরা মোর্শেদ। পরে এ ঘটনায় সাগিরার স্বামী রমনা থানায় হত্যা মামলা করলেও অজ্ঞাত ব‌্যক্তিদের আসামি করা হয়।


ঢাকা/মাকসুদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়