আদালতে দাঁড়িয়ে কিডনি রোগী ভাল করার চ্যালেঞ্জ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি আদালতে এজলাস কক্ষে দাঁড়িয়ে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়াই যেকোনো ধরণের কিডনি রোগ ভাল করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত এক রুলের শুনানিকালে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে তিনি এ চ্যালেঞ্জ করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানি করছিলেন।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত কক্ষে বসে থাকা এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন আমি কিছু বলতে চাই। এরপর তিনি আদালতের ডায়াসের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘মাই লর্ড, কিডনি চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস কিংবা প্রতিস্থাপন কিছুরই দরকার নেই। আমি আমার ২০ বছরের গবেষণার মাধ্যমে কিডনি চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী সফলতা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।’
তখন আদালত বিষ্ময়ভরে তার দিকে তাকিয়ে বলেন,আপনি কোথায় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন?
ঐ ব্যক্তি বলেন, ‘আমার নাম সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। আমি কেমিস্ট্রিতে লেখাপড়া শেষ করে কিডনি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করেছি। আমি একজন কিডনি চিকিৎসক। টিকাটুলিতে আমার চেম্বার।’
এসময় পুরো এজলাস কক্ষে হাসির রোল পড়ে যায়।
আদালত তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনাকে তো আমরা এই মামলার বিষয়ে এখানে ডাকিনি। আর আপনি কী বলছেন? আপনি কেমিস্ট্রিতে লেখাপড়া শেষ করে কিডনি চিকিৎসা করেন?’
তখন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার কাছে হাজার হাজার কিডনি রোগী এসে ভাল হয়েছে। ডায়ালাইসিসের রোগী এসে ভাল হয়েছে, তাদের আর কখনই ডায়ালাইসিস লাগেনি। সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী, সমাজের বড় বড় ব্যক্তি, এমনকি রওশন এরশাদও আমার কাছ থেকে কিডনির চিকিৎসা নিয়েছেন।’
এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সবার মাঝে একটা কৌতুহলী ভাব দেখা দেয়।
এ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সিরাজুল আলম ভুঁইয়া ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ’মাই লর্ড, আমার এক নিকট আত্মীয় ওনার ভেষজ ঔষধ খেয়ে কিডনি রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর মুখ থেকে এ কথার শোনার পর যেন পুরো আদালতকক্ষ নীরব হয়ে যায়।
আদালত এসময় সিরাজুল আলম ভুঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনি কি ঠিক বলছেন? আপনার আত্মীয় সুস্থ হয়েছেন উনার ওষুধ খেয়ে?’
এর জবাবে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার আত্মীয় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। এখন আর তার কিডনির সমস্যা নেই। ’
তখন আদালত বললেন, ‘তাহলে তো একে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত। একে তো সরকারের প্রমোট করা উচিত। যদি তার এই চিকিৎসা পদ্ধতি সঠিক হয় তাহলে তো এটা একটা বিস্ময়।’
একপর্যায়ে কিডনি চিকিৎসক দাবি করা সালাউদ্দিন মাহমুদ আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমার ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারেন। আমার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে খোঁজ নিতে পারেন। আপনারা দেখতে পারেন যে, আমার চিকিৎসায় কিডনি রোগী সফলভাবে সুস্থ হয় কি না। আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, কিডনি বিকল হওয়ার শেষ মুহূর্তে থাকা কোনো কিডনি রোগীও যদি আমার চিকিৎসা নেয় তাহলে তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ হবেন।’
এরপর হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন মাহমুদের বিষয়টি নিয়ে আপনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলতে পারেন। সত্যিই যদি কিডনি চিকিৎসায় ওনার কোনো সফল আবিষ্কার থেকে থাকে তাহলে তাকে প্রমোট করা উচিত।’
এরপর আদালত কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইন নিয়ে জারি করার রুলের রায়ের জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
ঢাকা/মেহেদী/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন