‘এমনি এমনি কি মানুষ আদালতে আসে’
মার্চের (২০২০) শেষ সপ্তাহের প্রথমদিন। ঢাকা সিএমএম আদালতে গিয়ে দেখা গেলো, আদালতের সামনে জটলা করে বসে আছেন শিশুসহ কয়েকজন নারী-পুরুষ।
সেখানে বসা একজন মুরসালিন জানান, প্রতিবেশী মাছ ব্যবসায়ী শফিকুলের সঙ্গে তার (মুরসালিন) বিয়ে হয়। তখন বয়স ছিল ১১ বছর। জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন শফিকুল। এরপর সংসার শুরু হলো। মেয়ের সংসার খুশি করতে দরিদ্র বাবা-মা সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়েছেন। ঘরে এলো পুত্র সন্তান। বর্তমানে তার বয়স তিন বছর।
মুরসালিন বলেন, ‘সংসারে সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকতো। শফিকুল কারণে অকারণে আমাকে মারধর করতেন। এ কারণে বেশির ভাগ সময়ই মায়ের কাছে থাকতাম। তারপরও টিকেনি সংসার।’
সম্প্রতি শফিকুল মুরসালিনাকে তালাক দিয়েছেন। মুরসালিন বলেন, ‘ও (শফিকুল) হুমকি দেখাতেন ম্যাজিস্ট্রেটের। তাই তো করোনার মধ্যেই বিমানবন্দর এলাকা থেকে মামলা করতে সন্তানকে নিয়ে আদালতে এসেছি। সাথে আছেন মা ও ভাই।’
তিন মাস বয়সের শিশুকে নিয়ে আরেকজন নারীকে বসে থাকতে দেখা যায় আদালতের বারান্দায়। সঙ্গে আরো দুই সন্তান। কেন আদালতে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আতঙ্কের মধ্যে মানুষ কি এমনি আদালতে আসে। গতকাল রাতে পুলিশ স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। তাইতো তো এসেছি।’
এদিকে, কামরাঙ্গীরচরে ২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার এক আসামি মাস খানেক জেলে থেকে জামিনে আছেন। সেদিন ছিল তার মামলার প্রথম ধার্য তারিখ। এজন্য আদালতে এসেছেন হাজিরা দিতে। তার সঙ্গে স্ত্রী আমেনা খাতুন এসেছেন মেয়েকে নিয়ে। এ সময় কেন আদালতে এসেছেন জানতে চাইলে আমেনা বলেন, ‘এমনি এমনি কি মানুষ আদালতে আসে। স্বামীর সাথে এসেছি। ’
করোনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের করোনা হবে না!’
রায়েরবাজার এলাকা থেকে ৯ দিন আগে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন হৃদয়। বর্তমানে তিনি কারাাগারে। স্বামীর অবস্থা দেখতে স্ত্রী কাজল ৪ মাসের ছোট মেয়ে, দুই বছরের ছেলে, মা আর বোনকে নিয়ে প্রথমে যান কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে আদালতে আসেন আইনজীবীর সাথে কথা বলতে। করোনার বিষয়ে জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘এই আতঙ্কের মধ্যে মানুষ কি এমনি আদালতে আসে। আমরাও এমনি আসিনি। কাছের মানুষ জেলে। তাই তো এসেছি। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের কিছু হবে না। আল্লাহ আছেন।’
ঢাকা/মামুন /সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন