ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আবদুল মাজেদ, এক কলঙ্কের নাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবদুল মাজেদ, এক কলঙ্কের নাম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক আসামিদের একজন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। বীরদর্পে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া মাজেদ গ্রেপ্তার হয়ে এই মুহূর্তে কারাগারের ভেতর। বিভিন্ন অপকর্মের হোতা এই মাজেদ জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

সোমবার দিবাগত রাতে তাকে রাজধানীর মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কে এই আবদুল মাজেদ

আবদুল মাজেদের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা গ্রামে। তার বাবার নাম আলী মিয়া চৌধুরী, মায়ের নাম মেহেরজান বেগম।

আবদুল মাজেদ চার কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জনক। আবদুল মাজেদের পরিবার বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন।

এতোদিন কোথায় ছিলেন মাজেদ

প্রায় ২৫ বছর ভারতের কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন আবদুল মাজেদ। চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফেরেন। তবে কীভাবে তিনি দেশে ফিরলেন এবং এরপর গত কয়েকদিন তিনি কোথায় ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

১৫ আগস্ট আবদুল মাজেদের ভূমিকা

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন মাজেদ। তখন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপুর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মাজেদ কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে রেডিও স্টেশন নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে ছিলেন। অন্য খুনিদের সঙ্গে দেশত্যাগের আগ পর্যন্ত বঙ্গভবনে ‘বিভিন্ন দায়িত্ব’ ছিল তার। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় চলে যান মাজেদ। তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই তারা সে সময় নিরাপদে দেশ ছেড়ে যান বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

আবদুল মাজেদ হলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় পলাতক ছয় খুনির মধ্যে একজন। পলাতক বাকি পাঁচ খুনি হলেন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।

জেলে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন এই ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। জেলহত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকন্ডের পর পুরস্কৃত হয়েছিলেন মাজেদ! বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অফিসারদের সঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের আদেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় যান। সেখানে তিনি ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে প্রায় তিন মাস থাকেন। সে সময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্যু করা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার স্বরূপ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বৈদেশিক বদলির ব্যবস্থা করেন, তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে সেনেগাল দূতাবাসে বদলির আদেশ দেন। পরে ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান সরকার ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেন এবং উপসচিব পদে যোগদানের সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে মাজেদ অবসর গ্রহণ করেন। পরে তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

এরপর তিনি মিনিস্ট্রি অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টে ডাইরেক্টর ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট পদের জন্য আবেদন করেন এবং ওই পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি ডাইরেক্টর অব হেড অব ন্যাশনাল সেভিংস ডিপার্টমেন্টে বদলি হন।

বিচার শুরু যেভাবে

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দায়মুক্তির অধ্যাদেশের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে। মামলার পর বিচারও শুরু হয়। সে সময় আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে যান আবদুল মাজেদ।

এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে ফের বন্ধ হয়ে যায় বিচার প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়।

রায় কার্যকর কীভাবে হবে

মঙ্গলবার মাজেদকে গ্রেপ্তার করার পর সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এখন ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করার জন্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই রায় কার্যকর করা হবে।’

আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময় বহু বছর আগেই পেরিয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ আর মাজেদ পাবেন না। তবে সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ তার থাকবে। সেই আবেদন তিনি না করলে বা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে সরকার এই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে।

অন্য আসামিরা সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া আসামিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি।

খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান এখনও পলাতক।

*  ২২ বছর কলকাতায় ছিলেন মাজেদ




পারভেজ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়