ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রিজেন্ট চেয়ারম্যানের যত অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রিজেন্ট চেয়ারম্যানের যত অনিয়ম

রোগীদের নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে পুলিশ।

বুধবার (৮ জুলাই) মামলায় গ্রেপ্তার ৮ আসামিকে আদালতে হাজির করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।  ৭ আসামির সাতদিন করে রিমান্ড এবং কামরুল ইসলামকে কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর গাজী।  সেই আবেদনে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী সাত আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড এবং কিশোর হওয়ায় একজনকে কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে, রিমান্ড আবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, রিজেন্ট হাসপাতারের  চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে সুখী ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ধুরন্ধর ও পাষণ্ড প্রকৃতির লোক।  অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তার কাছে মানুষের জীবন-মৃত্যুর কোনও মূল্য নেই।  তিনি তার সহযোগিদের সহায়তায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।  কোনও রোগী প্রতারণার কথা বুঝে প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। ফলশ্রুতিতে আর কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।  কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষার মর্মে পরীক্ষা বিনামূল্যে করার কথা থাকলেও প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা করে নিতো।  এছাড়া তিনি আইসিইউ ওয়ার্ডে রোগীদের ভর্তি রেখে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতো। কম-বেশি প্রায় ৬ হাজার রোগীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে রিপোর্টের ফি বাবদ প্রতারণার মাধ্যমে ২১ লাখ টাকা এবং চিকিৎসা প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া রিপোর্ট তৈরি, সরবরাহ করে রোগীদের কাছ থেকে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৩/৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের খাদ্য, অক্সিজেন, ওষুধ, বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ, রোগী পরিবহনের নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।  তার এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড, প্রতারণা, ভুয়া, জাল জালিয়াতি, অবহেলা ও দায়িত্ব জ্ঞানহীন তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের ফল জনস্বাস্থ্যের মারাত্মকভাবে ক্ষতি হয় এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে।

এদিকে, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মূলত রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি।  সেখানে রিজেন্ট হাসপাতাল ও মোহাম্মদ সাহেদের নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। মোহাম্মদ সাহেদ এর আগেও বিভিন্ন অপকর্মেও দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।  সে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করতেন। আমরা তাকে একজন অপরাধী হিসেবেই দেখছি। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার কথা জানান সারওয়ার বিন কাশেম।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে র‌্যাব।  মামলায় হাসপাতালের মালিকসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (৬ জুলাই) রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

অভিযানে ভুয়া করোনা টেস্টের রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকেই সিলগালা করা হয়।  সন্ধ্যায় ওই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

 

মামুন/নূর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়