ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এবার ১৬৫ কোটি টাকা উদ্ধারে মরিয়া দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এবার ১৬৫ কোটি টাকা উদ্ধারে মরিয়া দুদক

এবার এবি ব্যাংক থেকে দুবাইয়ে পাচার হওয়া ১৬৫ কোটি টাকা দেশে ফেরাতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে দুবাইয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এমএএলআর পাঠিয়েছে বলে দুদকেন ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন।

এর আগে বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খানের হংকংয়ে পাচার করা ১৬ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে  হংকং এ্যার্টনী জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠায় দুদক। রাষ্ট্রের অনুকুলে ওই অর্থ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে সম্প্রতি দায়রা জজ আদালতের রায় পাওয়ার পর চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক।

পাচার হওয়া ১৬৫ কোটি টাকার বিষয়ে দুদক সূত্র জানায়, আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজ ও স্কাই অ্যাপারেলস নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল হক। প্রতিষ্ঠান দুটির বিপরীতে এবি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। এবি ব্যাংকের মালিকপক্ষ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের জামাতা হওয়ার সুবাদে সাইফুল ইসলাম ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের পরিচিত ছিলেন। সাইফুল হক আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য খুররম আবদুল্লাহ ও আবদুস সামাদ খানেরও বন্ধু ছিলেন। সাইফুল হক ওই চক্রকে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এম ওয়াহিদুল হক ও ব্যাংকটির হেড অব ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামাল ব্যাংকের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা বোর্ডের অগোচরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবাই গিয়ে সাইফুল ও অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। চক্রটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানি পিনাকল গ্লোবাল ফান্ড (পিজিএফ) গঠন করেন এবং দুবাইয়ে আরেকটি কোম্পানি চেং বাও জেনারেল ট্রেডিং এলএলসির নামে দুবাইয়ের এডিসিবি ব্যাংকে একটি হিসাব খোলেন। পরে এম ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল খুররম আবদুল্লাহর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষা করে একপর্যায়ে একটি খসড়া চুক্তি অনুমোদনের জন্য এবি ব্যাংকের বোর্ডে উপস্থাপন করেন। এবি ব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদিত চুক্তির শর্ত ছিল, পিজিএফের ছয় কোটি ডলার ছাড় করার পর এবি ব্যাংকের দুই কোটি ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টি এবি ব্যাংক এবং পিজিএফের প্রতিনিধি যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত একটি ব্যাংক হিসাবে জমা দেবে।

তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও সাক্ষ্য–প্রমাণে দেখা যায়, এবি ব্যাংকের চট্টগ্রামের ওবিইউ শাখা থেকে থেকে সুইফটের মাধ্যমে দুবাইয়ের এডিসিবি ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে। ব্যাংকের ওই হিসাবটি আবদুস সামাদ খানের নিয়ন্ত্রণে ছিল।পরে ওই টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ওই টাকা কোথায়, কার নামে বা কার হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, সে বিষয়ে এবি ব্যাংক ও বিএফআইইউ কোনো তথ্য তদন্ত কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে পারেনি। তাই দুবাই থেকে তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহের জন্য এমএলএআর পাঠানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা অনুমতি চাইলে কমিশন অনুমতি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুবাইয়ে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে।

ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- এবি ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী, মো. ফজলুর রহমান, কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিম এবং এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা এবি ব্যাংকের চট্টগ্রাম ইপিজেড শাখা থেকে দুবাইয়ে পাচার করে এবং পরে তা আত্মসাৎ করে। কথিত ওই বিনিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের নেপথ্যে ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এক সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করা সাইফুল হকের এবি ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব নেই। তবে তিনি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের মেয়ের স্বামী।

এজাহারে আরো বলা হয়, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল ব্যাংকের বোর্ডকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবাই গিয়ে প্রতারক চক্রের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর ওই প্রতারক চক্র পিনাকল গ্লোবাল ফান্ড (পিজিএফ) নামে একটি কোম্পানি সৃষ্টি করে। সেই কথিত পিনাকলের ৮ কোটি ডলারের সঙ্গে এবি ব্যাংকের ২ কোটি ডলার মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে তা দুবাইয়ে বিনিয়োগের একটি কাল্পনিক প্রস্তাব তৈরি করা হয়। আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও শামীম আহমেদের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে তা পাস করিয়ে নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে চেং বাও জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামের এক কোম্পানির নামে পাঠানো ওই ২ কোটি ডলার আবুধাবির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। সেখান থেকে পরে তা আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ পাচারের ওই ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।

আরো পড়ুনঃ ১৬৫ কোটি টাকা উদ্ধারে এবার দুই মামলা করছে এবি ব‌্যাংক
 

ঢাকা/এম এ রহমান/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়