কিডনি প্রতিস্থাপন: ৮ বিশেষজ্ঞের মতামত হাইকোর্টে
কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে ৭ সদস্যর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটি আদালতে মতামত দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, আত্মীয় নন এমন কারো কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন নেই। আইনের বাইরে অন্য কারো কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হলে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ধনীরা বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার করবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারের মাত্রা বাড়বে বলে অভিমত দেন এ বিশেষজ্ঞ কমিটি। তবে সাত সদস্যের এই বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিষয়ে দেশের বর্তমান আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। এই আইনে নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার সুযোগ নেই। তাই একজন সুস্থ মানুষ চাইলে অন্য কাউকে তার অঙ্গ দান করতে পারেন এমন আইন থাকা দরকার। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আইনে বিশেষ বিধান রাখা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন।
পরে আদালত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন। এ অবস্থায় আদালত আগামী ২১ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
এর আগে গত ২৮ আগষ্ট হাইকোর্ট কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত জানতে চান। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভিসি ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়।
কমিটির অপর ছয় সদস্য হলেন- কিডনি ফাউন্ডেশনের চিফ কনসাল্ট্যান্ট অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ, বিএসএমএমইউয়ের নেপ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসিয়া খানম, বিএসএমএমইউয়ের ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশীদুল আলম, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মির্জা এম এইচ ফয়সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম এবং জাতীয় কিডনি ডিজিসেস ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা।
মানবদেহে কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৪ আগষ্ট এক আদেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯ সালের তিনটি (২গ, ৩ ও ৬) ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করেন। আজ তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
ফাতেমা জোহরা ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। এরপরও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা পেলেও আইনগত বাধার কারণে মেয়েকে আর কিডনি দিতে না পেরে রিট আবেদন করেন।
ঢাকা/মেহেদী/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন