ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শিশু হত্যার মিথ্যা মামলা: বাদীপক্ষের বিচার করবে একই আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু হত্যার মিথ্যা মামলা: বাদীপক্ষের বিচার করবে একই আদালত

বরিশালে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শিশু আবু সাঈদকে লুকিয়ে রেখে অপহরণ ও হত্যার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোতে জড়িত সেই শিশু ও তার বাবা-মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সম্প্রতি যে আদালত সেই মিথ্যা মামলা থেকে খালাস দেয় আসামিদের, সেই এজলাশেই  তাদের পক্ষে উল্টো মামলা নেয়া হয়েছে আগের বাদীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ (১) ধারায় ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম শাসসুন্নাহার নতুন মামলাটি নিয়েছেন, সেখানে আগের আসামিরা বাদী, আগের বাদীরা আসামী।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলার জন্য ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন, বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানার বদরপুর গ্রামের মৃত শফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং আবু সাঈদের বাবা মো. আজম (৪৩), তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৪০), মিথ্যা অপহরণ ও কথিত ‘নিহত’ সেই ছেলে আবু সাঈদ (১৮), একই গ্রামের খলিলুর রহমান (৫৫) ও মো. দুলাল (৪৫), একই থানার আমিরগঞ্জ গ্রামের মিরাজ হোসেন (৩৫), মরিয়ম বেগম (৩০), একই থানার কাজীরচর গ্রামের মো. আব্দুল জব্বার (৪২) এবং রাজধানীর হাজারীবাগ থানার বোরহানপুরের বাসিন্দা সীমা বেগম।

আসামিদের মধ্যে আজম ও মিরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং অপর আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। আসামিদের মধ্যে আবু সাঈদ, তার বাবা মোহাম্মদ আজম, মা মাহিনুর বেগম ও মো. আব্দুল জব্বার প্রতারণার মামলায় গত ৩১ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে আবু সাঈদকে অপহরণ ও হত্যার মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিন আসামি খালাস পেয়েছেন । এরা হলেন, বরিশাল জেলার হিজলা থানার পশ্চিম কোড়ালিয়া গ্রামের মো. শাহজাহান মোল্লার মেয়ে সোনিয়া আক্তার (২৫), তার ভাই আফজাল হোসেন (২৩) ও আত্মীয় একই গ্রামের আসগর উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম হাওলাদার (২৩)। যারা মামলাটিতে ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত বিনা অপরাধে কারাভোগ করেন এবং ৫ বছর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেন।

একই বিচারক বেগম শাসসুন্নাহার গত ১ নভেম্বর তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন।

একই দিন বিচারক মামলায় আসামিদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই (বর্তমানে ডেমরা থানায়) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছেন।

মামলার ভুক্তভোগীদের আইনজীবী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পড়াশোনা ভাল না লাগায় আবু সাঈদ নিজ থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে মিথ্যা অপহরণ মামলা করা হয়। আর তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই মিথ্যা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে তাদের নির্যাতন করে দুই জনকে দিয়ে আবু সাঈদকে নদীতে ফেলে হত্যা করেছেন মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করেন। মামলার দুই বছর পর ছেলে ফিরে আসলেও বাদী তা আদালতকে জানায়নি। বরং আপোষের কথা বলে ৫ লাখ টাকা নেয়। আরও ২ লাখ টাকা নিতে এসে গত ৩০ আগস্ট ধারা পড়ে। মূলত সোনিয়া আক্তারকে প্রথম স্ত্রী থাকার পর উল্টো মামলার আসামি মিরাজ হোসেন মিথ্যা বলে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী থাকার কথা জানার পর সোনিয়া চলে আসায় মিরাজ হোসেনই তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে এ মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসিয়ে দেন।

তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই (বর্তমানে ডেমরা থানায়) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধেও মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল বাবা মো. আজম একটি জিডি করেন। ওই জিডির পর তিনি অজ্ঞাতানা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলা করেন। ওই মামলায় বিভিন্ন সময় আসগর আলী, মিলন, মো. সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও মো. শাহীন বারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে মামলায় ২০১৪ সালের ৭ ডেসেম্বর সাইফুল ও আফজাল ঢাকা সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, ভিকটিম আবু সাঈদকে তারা অপহরণ করে হত্যার পর লাশ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই মো. রুহুল আমিন ২০১৫ সালের ১৫ জুন অপহরণ পূর্বক হত্যার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্কের পর্যায়েই মিথ্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হয়।


ঢাকা/মামুন খান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়