ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘প্রতারকরা সংগ্রহ করছে স্যাম্পল’

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘প্রতারকরা সংগ্রহ করছে স্যাম্পল’

প্রথমে করোনা রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করে। কিন্তু করা হয় না কোন পরীক্ষা। মনগড়া রিপোর্ট দেয়। এর বিনিময়ে প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে তাদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিচ্ছে। এমন চক্রের সন্ধানে জানতে পেরে তাদের ধরতে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বুধবার (২৪ জুন) দুপুরে এ বিষয়ে কথা হয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সময় নানা ধরনের প্রতাকচক্র মাথা গজিয়ে উঠতে পারে- এমন ধারণা থেকে করোনা টেস্ট্রের নামে প্রতারকদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব, ডিবিসহ অন্য সংস্থাগুলো নজরদারি করছে। তবে এ রকম কেউ বাসায় গেলে তার বিষয়ে ভাল করে যাচাই করতে হবে। সন্দেহ হলে নিকটস্থ থানায় জানান।’

এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা রোগীর সন্ধান কিংবা নমুনা সংগ্রহের নামে প্রতারক শ্রেণি থেকে সাবধান থাকতে হবে। তারা সুযোগ বুঝে বাসাবাড়িতে প্রবেশ করছে। করোনা টেস্ট বা করোনা সচেতনতার নামে তারা লুটপাটও করতে পারে।

পুলিশের কাছে এমন তথ্য থাকায় মঙ্গলবার আশকোনা থেকে হুমায়ন কবীর, তানজিনা পাটোয়ারি, আরিফুল চৌধুরী ও গুলশান থেকে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারের ১১ তলা, ১৪ তলা ও ১৫ তলায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা। এটি করোনা টেস্টের জন্য সরকার অনুমোদিত। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃতরা এখান থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্যাম্পল নেওয়ার কাজ করছে। পরে তা কম্পিউটারে লিখে ওইসব ব্যক্তিদের মেইলে পাঠিয়ে দেয়। এ জন্য প্রতিটি রিপোর্ট থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’

পুলিশ বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এর পরীক্ষার অনুমোদন দেয় সরকার। এর আড়ালেই মূলত প্রতারচক্র গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ভেতরের লোক কিংবা চাকরি ছেড়ে দেওয়া লোকজনই এখন করোনা পরীক্ষার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। তারা বাসায় গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করার পর তা আর পরীক্ষা করে না। নেই কোন ল্যাব। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্যাম্পল সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করে। করোনার বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে তার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ উল্লেখ করা হয়। কোনো উপসর্গ না দেখা দিলে রিপোর্টে নেগেটিভ উল্লেখ করা হয়। এরকম ভুয়া পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে বুকিং বিডি, হেলথ কেয়ারসহ ১০ টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে। চলছে নজরদারিও। বিশেষ করে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে। অবৈধভাবে অর্থ উর্পাজনের জন্য তাদের রয়েছে বিশাল প্রতারকচক্র। যে চক্রে সংখ্যা অর্ধশতাধিক প্রতারক জড়িত। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে করোনার স্যাম্পল সংগ্রহের কাজ করছে।

তবে এ বিষেয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দু:খনজক। কেননা করোনার কাছে মানুষ অসহায়। যার সুযোগ নিয়েছে প্রতারকরা। তবে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করার কাজ করছে।’


ঢাকা/মাকসুদ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়