হোটেল ওলিওতে বিস্ফোরণ: ৩ বছরেও বিচার শুরু হয়নি
হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল
তিন বছর আগে (২০১৭ সাল) ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিওতে বিস্ফোরণের তিন বছর পার হলেও মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়নি। কবে বিচার শুরু হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
পান্থপথের ওই হোটেলে আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে তাদের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ১৪ আগস্ট রাত থেকে অভিযানের মধ্যে ওলিও হোটেল ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে পুলিশের বিশেষ বাহিনী স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) নামে অভিযানে। এক পর্যায়ে সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন।
ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করে। ২৭ মাস মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারের অপেক্ষায়। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জশুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষ করতে আড়াই বছরের বেশি সময় লেগেছে। এরপর আমাদের আদালতে এসেছে। আমরা মামলার বিচারকাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে যায়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর এখন আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলাটি চার্জশুনানির পর্যায়ে রয়েছে। চার্জগঠন হয়ে গেলে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।
২০১৭ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
হামলার পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই সময় কলাবাগান থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ ইমরুল সায়েদ। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক, তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।
তাজুল ছাড়া অপর ১৩ আসামির মধ্যে তাজরীন খানম, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম, হুমায়রা জাকির নাবিলা ও আব্দুল্লাহ এ ৬ আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। বাকি ৭ আসামি কারাগারে।
আবু তুরাব খান, সাদিয়া হোসনা লাকী ও তাজরীন খানের আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ জানান, আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। আবু তুরাব খান ও সাদিয়া হোসনার ছেলে আকরাম হোসেন। সে বাবা-মার বা বোনের কাছে টাকা চাইতে পারেন। এজন্য অর্থদাতা হিসেবে মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। চার্জশুনানির দিন তাদের অব্যাহতির আবেদন করবো। এরপরও যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে তাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা করবো।
আসামি আব্দুল্লাহর আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, চার্জশুনানির দিন আসামির অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করবো। যদি চার্জ গঠন হয়ে যায় তারপর সাক্ষীদের জেরা, যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে আসামিকে কিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় সেই চেষ্টা করবো।
রাইজিংবিডি
আরো পড়ুন