বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির সাজা কবে কার্যকর হবে?
হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ৫ জনের সাজা এখনো কার্যকর হয়নি। এই ৫ আসামি হলেন—খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন ও রাশেদ চৌধুরী। তারা ৫ জনই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সরকার বলছে, এই আসামিদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে, কবে নাগাদ আদালতের রায় কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সরকারের কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
এদিকে, আসামিদের অবস্থান চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি করা হয়েছে। এরপরও ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোধ্যে মোসলেম উদ্দিনের আটকের বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এই বিষয়ে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
প্রসঙ্গত, এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন সময়ে কার্যকর করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর গত ১২ এপ্রিল (২০২০) ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এছাড়া দণ্ডিত আরেক আসামি আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
পলাতক ৫ আসামির মধ্যে দুজনের বিষয়ে সুস্পুষ্ট তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে। তারা হলেন—রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরী। রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে আলোচনাকালে একাধিকবার তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। অবশেষে চলতি বছর ১৭ জুন খুনি এম রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব নথি তলব করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। রাশেদ চৌধুরীর নথি তলবের পর এখন যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হতে পারে। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
নূর চৌধুরী পালিয়ে রয়েছেন কানাডায়। ১৯৯৬ সালে খুনি নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী কানাডায় যান ভিজিট ভিসায়। সেখানে গিয়ে তারা শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেন। তখন থেকেই কানাডায় অবস্থান করছেন তারা। নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন। ওই সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাকি তিন আসামির বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মোসলেহ উদ্দিন ভারত অথবা পাকিস্তানে আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানকে বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। আর ভারত সরকার বলেছে, মোসলেহ উদ্দিন তাদের দেশে নেই। এছাড়া, আব্দুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম চীন, কেনিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, লিবিয়া, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যেকোনো দেশে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চিঠি দিয়েও প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় ধরে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলছে। এখন পর্যন্ত ২ জনের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ৩ জনের অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করছি। পলাতক আসামিদের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের কাছে তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে।’ তবে সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
হাসান/এনই
আরো পড়ুন