ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বাস্থ‌্যের আজাদের বিরুদ্ধে আসতে পারে তথ‌্য গোপনের অভিযোগ 

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২০:৩৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
স্বাস্থ‌্যের আজাদের বিরুদ্ধে আসতে পারে তথ‌্য গোপনের অভিযোগ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী রায়হানা বেগমের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  তাদের সম্পদের প্রকৃত মূল‌্য নথিপত্রের উল্লিখিত মূল‌্যের সঙ্গে গরমিল পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। একারণে তাদের বিরুদ্ধে সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন করার অভিযোগ আনা হতে পারে। দুদকের এক কর্মকর্তা এই তথ‌্য জানিয়েছেন। 

আজাদের ঘোষণায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবরে একটি ফ্ল্যাট দেখিয়েছেন, যার মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া, আজাদ দম্পতির সম্পদ বিবরণীতে মাত্র ৪০ হাজার টাকার ফার্নিচার দেখিয়েছেন। যা বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে দুদকের অনুসন্ধানে।

২০১৭ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নের বিবরণ থেকে জানা গেছে, আজাদ ও তার স্ত্রী দু’জনেই কর অঞ্চল-১০-এ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। ২০১৭ সালে এনবিআরে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন বিশ্লেষণ করলে দুই জনের সম্পদ মিলিয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার কিছু বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। 

দুদক ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ কর অঞ্চল ১০ এর আওতায় ২০৩ নং সার্কেলের করদাতা। ২০১৭ সালে তিনি ৫২ হাজার ৯৫৩ টাকার কর জমা দিয়েছেন। ওই আয়কর বিবরণীতে আজাদের উল্লেখ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের উত্তর আদাবরের বাইতুল আমান সোসাইটি লিমিটেডের ১২/এ নম্বর রোডে নিজের মালিকানা একটি ফ্ল্যাট যার মূল্য দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, রামচন্দ্রপুরে মোট ৭ কাঠা জমি, ইসলামী ব্যাংক ও সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবে প্রায় ৬ লাখ টাকা এবং নগদ অর্থের পরিমাণ ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯২৩ টাকা। সব মিলিয়ে নিট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৭৮ লাখ ৮১ হাজার ১৩৭ টাকা।

অন্যদিকে, কর অঞ্চল ১০ এর ২১৩ নং সার্কেলের করদাতা আজাদের স্ত্রী রায়হানা বেগম। ২০১৭ সালে তিনি ৭৭ হাজার ১৮১ টাকা কর দিয়েছেন। আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা তথ্য অনুসারে, রায়হানা বেগম নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ডিপিএস ২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকার ফার্নিচার, ৮ লাখ টাকার ব্যক্তিগত গাড়িসহ ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৩ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মোট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৬৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৩ টাকা।

যদিও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা ও দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবুল কালাম আজাদ নিজেকে সৎ ও দক্ষ দাবি করে আসছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি একজন কঠোর পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, সৎ, দক্ষ, সফল ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে সারাজীবন কাজ করেছি। আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। কেউ অপরাধ করলে তার কঠোর শাস্তি হোক এটা আমি চাই। এই বিষয়ে দুদকের তদন্তে আমি প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেবেন।’

গত ১২ ও ১৩ আগস্ট তাকে দুদকের একাধিক টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়া দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিমও তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু দুদক।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘তাকে মাস্ক ও রিজেন্টসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে। ’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন ডা. আজাদ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে ওই পদে রেখেছিল সরকার। সেই অনুযায়ী তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের এপ্রিলে। কিন্তু গত মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হতে থাকলে বিপাকে পড়তে হয় ডা. আজাদকে। এক পর্যায়ে গত ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র দেন তিনি।

এম এ রহমান/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়