ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন ড্রাইভার মালেক: র্যাব
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সাধারণ গাড়িচালক মো. আব্দুল মালেক। তবে তিনি পেশায় সাধারণ হলেও ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাধর। আর এই ক্ষমতার বলেই তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদও গড়েছেন’ বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে কথা হয় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহর সঙ্গে।
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মালেকের ব্যাপারে আমরা প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করি। তিনি একজন পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী। এ কারণে সব সময় অবৈধ অস্ত্র সঙ্গে রাখতেন। মূলত নিজেকে জাহির করার জন্য তিনি এই কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকরির সুবাদে তিনি যে অঢেল সম্পদ করেছেন তাই নয়, ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তিও দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অনেকেই র্যাবের কাছে অভিযোগ করছেন। তদন্তের পর আমরা সেগুলো পরবর্তীতে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরব।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালেক অষ্টম শ্রেণি পাস। ১৯৮২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের ড্রাইভার এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে স্বাস্থ্যের একটি প্রকল্পে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর তিনি পরিবহন পুল প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরেও কর্মরত ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের গাড়ির ড্রাইভার হন। এরপর থেকেই তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ড্রাইভার হলেও তার আচরণ ছিলো ডিজির মতই। সেই সুবাদে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাইভার কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটান। যেখানে তিনি প্রভাব দেখিয়ে সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। পদে আসিন হওয়ার পর তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে কোনো ড্রাইভারকে অন্যায়ভাবে অশালীন ভাষায় গালমন্দ, এমনকি চড়-থাপ্পড়সহ বিভিন্ন সময় মারধর করতেন। তবে সাবেক ডিজি’র গাড়ি চালক হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।
এই প্রভাবের বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, বদলি কিংবা পদোন্নতি সবই তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার কথা না শুনলে তাকেও ভয়ভীতি দেখানো হতো। এভাবে বিভিন্ন সময় মালেক বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অধিদপ্তরে প্রচার আছে।
একে একে অধিদপ্তরে নিজের মেয়ে নওরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী, ভাই আব্দুল খালেককে অফিস সহায়ক, ভাতিজা আব্দুল হাকিম, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার এবং নিকট আত্মীয় কামাল পাশাকে চাকরি দেন।
র্যাবের তদন্ত বেরিয়ে এসেছে, আব্দুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী হলেও গোপনে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন। একইসঙ্গে অস্ত্রের ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সেই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিলাস বহুল গাড়ির মালিক বনে গেছেন। ব্যাংকে রেখেছেন নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা। তুরাগ এলাকার দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাত তলা বিলাসবহুল বাড়ি, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসব সম্পত্তির উৎস জানতে তদন্তে নেমেছে দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তে নিশ্চিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সেক্ষেত্রে সিআইডি মামলাটি দায়ের করবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) তুরাগের হাজী কমপ্লেক্স থেকে আত্মগোপনে থাকা মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসময় তার কাছে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা পাওয়া যায়। এসব অপরাধে তাকে আদালতে পাঠিয়ে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা/মাকসুদ/সনি
আরো পড়ুন