ব্যবসায়ীর মৃত্যু: পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ পরিবারের
পল্লবী থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদের বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলা করে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবারটি। একইসঙ্গে সুজনের বৃদ্ধা মাসহ দুই ভাইকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও করা হয়েছে।
নিহত সুজনের মা শাহিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ছেলেটাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। বিচারতো পেলামই না, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমার মতো বয়স্ক একজন নারীর বিরুদ্ধে ইয়াবার মামলা দেওয়া হয়েছে। দুই ছেলেকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। ইয়াবা কি কোনোদিন চোখেও দেখিনি।
সুজনের ভাই জহিরুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমার ভাই ঝুট ব্যবসা করতো। এসআই জাহিদ প্রতিমাসে এসে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতো। এক সময় জাহিদ ভাইয়ের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে বাসা থেকে ধরে মারতে মারতে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জহিরুল ইসলাম আরও বলেন,এখনো জাহিদের লোকজন হয়রানি করছে। জাহিদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে ১৩ মাস জেল খাটিয়েছে। ভাই হত্যার বিচারতো পেলাম না, উল্টো আমরা আসামি হলাম। সরকারের কাছে এ মামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান সুজন।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, জনি হত্যা মামলার রায়ে আসামিদের সাজা হয়েছে। এ মামলারও বিচার শেষ হওয়া উচিত।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করছেন। যেহেতু মামলাটি হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন সেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়ে ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পায় সেই চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন মারা যান। ঘটনার এক সপ্তাহ পর ২০ জুলাই মিরপুর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন তার স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি।
পরে আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর ওই বছরের ৬ নভেম্বর মামলাটিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। আর এসআই জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল ও জনৈক মিথুনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
পরের বছর এসআই জাহিদসহ ৫ জনের বিচার শুরু করেন আদালত। এর কিছুদিন পর অপহৃত হন মামলার বাদী মমতাজ সুলতানা লুসি।
এর মধ্যে মামলাটিতে হাইকোর্ট এসআই জাহিদের পক্ষে স্থগিতাদেশ দেন। এরপর থেকে আর কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
ঢাকা/মামুন/জেডআর
আরো পড়ুন