১৪ বছর পর কনডেম সেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কুমিল্লার হুমায়ুন
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবিরকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এতে ২০০৬ সাল থেকে কনডেম সেলে থাকা হুমায়ুনের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ হুমায়ুন কবিরের জেল আপিল মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদালতে হুমায়ুনের পক্ষে শুনানি করেন তার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এবিএম বায়েজি। তিনি বলেন, ‘খালাস হওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলে তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পান কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে। যদিও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারও প্রায় দুই বছর আগে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ওই হত্যাকাণ্ডের পর।
পরবর্তীতে হাইকোর্টে জেল আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর জেল আপিল করেন আপিল বিভাগে।
আইনজীবী জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বেলা সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করে তার অভিভাবকরা।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।
ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এসময় আরও ৫-৬ জন লোক ছিলো সেখানে।
ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে, সে শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেয়নি। পরে এ ঘটনায় ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ।
ওই বছরের ৪ জুলাই ট্রাক চালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
এ মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রাখেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন হুমায়ুন। এই আপিলের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেন।
আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিলো না। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, শিশুটি তার খালাত বোনের মেয়ে। শিশুর বাবা তার কাছে ১৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কি না। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
ঢাকা/মেহেদী/সনি
আরো পড়ুন