ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তাবেলা সিজার হত্যা: ৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  
তাবেলা সিজার হত্যা: ৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার চার বছরেও শেষ হয়নি। আদালতে সাক্ষী না আসায় এ মামলার বিচারকাজ তেমন এগোয়নি। এছাড়া, করোনাভাইরাসের প্রভাবে আদালতে সাধারণ ছুটি থাকায় বিচার কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, এ বছর মামলাটির বিচার সম্পন্ন হবে।

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। ওই দিন তার সহকর্মী আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জেহাদ হোসেন সাক্ষ্য দেন। তবে তার সাক্ষ্য শেষ হয়নি। আদালত আগামী ১৪ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

তাবেলা সিজার হত্যা মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষের দিকে। অনেক আগেই বিচারকাজ শেষ হতো। করোনাভাইরাসের কারণে মামলার বিচার শেষ হতে বিলম্ব হয়েছে। মূল তদন্ত কর্মকর্তা ও মামলার বাদীর সাক্ষ্য শেষ হলে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায় শেষ হবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন, সাফাই সাক্ষ্য ও বিচারের সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের পর রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত। আশা করছি, এ বছরই মামলাটির বিচার শেষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’

ওই মামলার আসামি আবদুল মতিনের আইনজীবী শওকত হোসেন মিঞা বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আব্দুল মতিনের সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার পর দীর্ঘদিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডিও করা হয়। অনেক দিন পর তাকে মামলাটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। কোনো সাক্ষী সেভাবে মতিনের নাম বলেননি। আমরা তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনিভাবে লড়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, তিনি মামলায় খালাস পাবেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তাবেলা সিজার। তিনি আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২২ জুন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমসহ (কাইয়ুম কমিশনার) সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়—হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ পরিকল্পনা করা হয়।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।

২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। ১১ নভেম্বর মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত চার্জশিটভুক্ত ৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন—কাইয়ুম কমিশনার, তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারি সোহেল এখনও পলাতক। গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি চার আসামিই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মতিন জামিনে এবং বাকি চার আসামি কারাগারে আছেন।

ঢাকা/মামুন খান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়