ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সেই শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ৪ অক্টোবর ২০২০  
সেই শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ

মধ্য রাতে কোর্ট বসিয়ে দুই শিশুর অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পর এবার তাদের নিরাপত্তায় দুজন পুলিশ সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই দুই শিশুকে ১১ অক্টোবর আদালতে আসতে বলা হয়েছে। ওই দিন হাইকোর্ট শিশু দুটি ও তাদের চাচার বক্তব্য শুনে পরবর্তী আদেশ দেবেন।

রোববার (৪ অক্টোবর) বিকেলে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ উল্লিখিত আদেশ দেন।

আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।

শনিবার মধ্য রাতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবীর দুই নাতি পিতৃহীন কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবীকে পৈত্রিক বাড়িতে তুলে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ‌্যানেলে সম্প্রচারিত এ সংক্রান্ত টকশো আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান।

হাইকোর্টের ওই আদেশের পর রাতেই ধানমন্ডি থানার ওসি দুই শিশুকে পৈত্রিক বাড়িতে তুলে দিয়ে আসেন।

টকশোতে থাকা আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনা হচ্ছিল দুটি শিশুকে নিয়ে। ওই দুটি বাচ্চা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত ব্যারিস্টার কে এস নবীর নাতি। তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দিচ্ছেন না তাদের চাচা। কিছু দিন আগে এই দুই শিশু বাবাকে হারিয়েছে। ওই টকশোতে আমি যুক্ত ছিলাম। টকশোটি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু তাহের মোহম্মদ সাইফুর রহমানের নজরে আসায় তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিক আদেশ দেন। আদেশে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় নিরাপদে রেখে আসতে ধানমন্ডি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।’ 

জানা গেছে, রাজধানী ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবী। উত্তারাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও কয়েকদিন ধরে তা পারছে না কেএস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই সন্তান।

গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলেকে কয়েকদিন আগে বাসা থেকে বের করে দেন ওই শিশুদের আপন চাচা কাজী রেহান নবী। আগেই শিশু দুটির বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থাকে। মায়ের কাছ থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করে ওই দুই শিশু। কিন্তু তাদেরকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কয়েকবারের চেষ্টা করেও শিশু দুটি ওই বাসায় ঢুকতে পারেনি। বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলেও পুলিশের কথা আমলে নেননি শিশুদের চাচা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।

শিশু দুটির ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ বলেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদের পর ওদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকত। বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি খুব বেশি বিষণ্ন হয়ে পড়ে। তারা তাদের মায়ের কাছে কিছু দিন থেকে গতকাল বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু বাসার গেট খুলে দেওয়া হয়নি। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। কিন্তু তিনি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে পরে বাড়িতে আসতে বলেন। এরপর আমরা ধানমন্ডি থানাকে বিষয়টি অবহিত করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িটি এখনো কেএস নবীর নামে আছে। সেদিক থেকে দেখলে, ওই শিশু দুটিও ওই বাড়ির উত্তরাধিকারী। বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটির ব্যাংক ব্যালেন্স দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রেহান নবী।‘

ঘটনাটি নিয়ে শনিবার রাত ১২টায় একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এ সময় একাত্তর জার্নালে শিশু দুটির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সময়েই বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মধ‌্য রাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
জানা গেছে, এর আগে রাতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত বসিয়ে কয়েকটি আদেশ দেওয়ার নজির আছে। কিন্তু মধ্য রাতে আদেশ দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বিরল।

ঢাকা/মেহেদী/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়