ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভ্যাট নথি ছাড়াই চলে মি. বেকারের ৩৪ দোকান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০২০  
ভ্যাট নথি ছাড়াই চলে মি. বেকারের ৩৪ দোকান

ভ্যাটের হিসাবপত্র ছাড়া মি. বেকারের ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্র ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীর পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের ৫টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

যে কারণে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে এসংক্রান্ত টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপাড়া শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের হিসাব তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান রাইজিংবিডিকে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’ এর বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিকার চান। এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এরপরই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান ও তাদের ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে রেকর্ডপত্র যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রমাণ পায়। প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ছাড়া পণ্য সরবরাহ ও বিক্রি করায় ‘মি. বেকার’-কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ‘মি. বেকার’ এর টঙ্গী ও গাজীপুরের হেডঅফিসে (কারখানা) ভ্যাট গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করে। এতে গোয়েন্দা দল ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীতে পেস্ট্রি শপের ২৯টি ও সুইটমিটের ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই হেডঅফিসের ঠিকানায় তাদের কারখানাও অবস্থিত। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে এসংক্রান্ত টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপাড়া শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। 

ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, গোয়েন্দার পৃথক দুটি দল ২০ অক্টোবর তুরাগের মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড ও গাজীপুর সদরের মি. বেকার সুইটসের হেড অফিস কাম কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠান দুটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার, ফেরদৌসি মাহবুব ও তানভীর আহমেদ। 

পরিদর্শনের সময় ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিল দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা সদুত্তরও দিতে পারেননি। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠানের সামনে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলও রাখেন না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দল মনে করে নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি। অভিযানের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির সামনে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরনো কিছু অসংগঠিত তথ্য পায়। গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে। 

যাতে প্রমাণিত হয় ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ছাড়া পণ্য সরবরাহ ও বিক্রি করায় ‘মি. বেকার’-কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে আজ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে।

অভিযানে জব্দ করা দলিল ও ব্যাংক থেকে পাওয়া দলিলের ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত ‘মি. বেকার’ এর যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। 

ঢাকা/এম এ রহমান/জেডআর

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়