ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

এমবিবিএসের ভুয়া সনদ: বিএমঅ‌্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২১:৩৬, ২ ডিসেম্বর ২০২০
এমবিবিএসের ভুয়া সনদ: বিএমঅ‌্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ‌্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমঅ‌্যান্ডডিসি)-এর রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা কারছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ কর্মকর্তা) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মামলার আসামিরা হলেন, বিএমঅ‌্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। এছাড়া যে ১২জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাশের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন, তাদেরও আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন,  কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা ভুয়া সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ নেন। ওই ১২ বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন বলে জানান। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বিএমঅ‌্যান্ডডিসিতে  রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন  দাবি করে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহন করেন। এরপর দেশের বিভিন্ন মেডিক‌্যাল কলেজে শিক্ষানবিশ হিসেবে অনুশীলন শুরু করেন।  একইসঙ্গে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায় যে, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।

এজাহারে আরও বলা হয়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠায় দুদক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ওই সনদপত্রগুলো যাচাই করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ‌্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে  ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র প্রেরণ করে। এসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে এই ১২ জনের এমবিবিএস-সনদ ভুয়া।  এছাড়া, সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের অভিমত নেওয়া হয়।  তাতেও দেখা যায়, সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। ওই ১২জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনোই চীনের তাইশান মেডিক‌্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবল ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, তবে, সেই দেশে থাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং তাদের এমবিবিএস ডিগ্রির সনদগুলো ভুয়া। 

এদিকে, বিএমঅ‌্যান্ডডিসির সনদ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো  সতর্কতা বা নিয়ম-নীতির প্রতিপালন করা হয়নি। বিএমঅ‌্যান্ডসিরপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিনের মাধ‌্যমে  প্রার্থীরা  তাদের ওইসব ডকুমেন্ট জমা দেন। তিনি রেজিস্ট্রারের কাছে সেগুলো উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলো সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টগুলো সম্পর্কে তারা জানতেন মর্মে প্রমাণিত বলেও দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ঢাকা/এম এ রহমান/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়