ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ছেলের লাশটাও দেখতে পেলাম না’

মামুন খান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:৩১, ৮ ডিসেম্বর ২০২০
‘ছেলের লাশটাও দেখতে পেলাম না’

তুর্কি মুন্না (ফাইল ফটো)

তুর্কি মুন্না। যার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ইচ্ছা ছিল বিদেশে পড়তে যাওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ করে দেয় ছিনাতাইকারীরা।

গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন মুন্না। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় তার মা-বাবা।

মুন্না খুন হওয়ার কয়েকদিন পরে দেশে আসেন সৌদি প্রবাসী বাবা মো. জাকারিয়া। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছেলেকে মানুষ করার জন্য বিদেশ ছিলাম। আজ সেই ছেলেই আমার নেই। ঘাতকরা নির্মমভাবে তাকে হত্যা করেছে। কী নিয়ে বেঁচে থাকবো। শেষবারের মতো ছেলেটার মুখও দেখতে পেলাম না।’

ছিনতাইকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ওরা সবকিছু নিয়ে আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দিতো। ওকে হারিয়ে আমরাও জীবিত থেকেও মৃত। যা হারানোর তা হারিয়েছি। এখন তো আর ছেলেকে ফিরে পাবো না। তবে যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।’ 

মুন্নার বড় বোনের স্বামী মো. লালন মোল্লা বলেন, ‘মুন্না অনেক আদরের ছিল। ওর মতো নম্র আর ভদ্র ছেলে হয় না। পড়াশোনাতেও ভালো ছিল। মুন্না জেএসসিতে এ প্লাস, এসএসসিতে পেয়েছিলো জিপিএ ৪.৮৩। ও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। আমাদের ইচ্ছা ছিল ও ডাক্তার হোক। কিন্তু ওর ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং হওয়ার। কানাডা কিংবা যুক্তরাজ‌্যে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেয়েছিল। সেজন্য ঢাকায় গিয়ে আইইএলটিএস (ইন্টারন‌্যাশনাল ইংলিশ ল‌্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) করছিল। এটাই ওর কাল হলো। মুন্না ঢাকা না গেলে হয়তো মরতো না।’ 

মুন্নার মা শাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার। তাই ঢাকায় থেকে আইইএলটিএস পরীক্ষার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল এবং সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়। আবার নড়াইলে এসে সার্টিফিকেটের নকল কপি তুলে ঢাকায় গিয়েছিল সেদিন। শেষ যখন তার সঙ্গে কথা হয়, তখন রাত বাজে সাড়ে ৩টা। ছেলে বলেছিল, তার মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফোন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাসায় পৌঁছে ফোন দেবে। পরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেলাম, আমার ছেলে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছে।’

এ ঘটনায় রাজধানীর শাহ আলী থানায় হত্যা মামলা করেন মুন্নার চাচা হাফিজুর রহমান হাফিজ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান বলেন, ‘মুন্না খুনের সঙ্গে জড়িত ছয়জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দুজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত দ্রুত শেষ করে দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।’ 

গ্রেপ্তার ছয় জন হলেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান হলেন ওমর ফারুক (২৭), তার সহযোগী রাকিব (২৫), আরিফ (২৪), রাসেল (২৩), রাসেল শিকদার (২১) ও শাকিল (১৯)। শাহিন ও রাজীব পলাতক।

এদের মধ্যে প্রথম তিনজন তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন। এছাড়া, পরের তিন জন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারাও কারাগারে আছেন।

যেভাবে খুন করা হয় মুন্নাকে: তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘রাসেল পেশাগত ছিনতাইকারী। রাসেল শিকদার ও শাকিল অটোরিকশা চালক। রাসেল তার সহযোগীদের নিয়ে রাসেল শিকদার ও শাকিলের অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে মিরপুরের বিভিন্ন রাস্তায় রাতে ছিনতাই করে। গত ১৮ নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে রাসেল তার বন্ধু ওমর ফারুক, শাহীন, রাজীব, আরিফ ও রাকিবকে নিয়ে বের হয়। ভোর ৫টার দিকে মুন্না মিরপুর-১ নম্বর ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা মুন্নার গতিরোধ করে। তারা মুন্নার সঙ্গে থাকা সব কিছু ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে মুন্নার ধস্তাধস্তি হয় এবং সে চিৎকার করার চেষ্টা করে। ওই সময় ওমর ফারুক নামে একজন তার বুকে চাকু মারে। মুন্না রক্তাক্ত অবস্থায়  মাটিতে পড়ে যায়। পরে ছিনতাইকারীরা সবকিছু ফেলে রেখে চলে যায়। পরে মুন্না মারা যায়।’

ঢাকা/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়