ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সবার দৃষ্টি অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের দিকে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৫৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সবার দৃষ্টি অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের দিকে

ফাইল ছবি

ঢাকার নিম্ন আদালতে এ বছরের শুরু থেকেই বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যা হত্যা মামলা ও প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায় হয়েছে। এবার সবার দৃষ্টি আলোচিত  ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের দিকে। 

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কম্পিউটার প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে নৃশংসভাবে খুন হন।  এ সময় তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী বন্যা আহমেদও জখম হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশে বিচারের দাবিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হয়।

জানা যায়, অভিজিতের কাঙ্খিত আড্ডার জায়গা ছিল গ্রন্থমেলা।  প্রবাসে থাকলেও এই সময় ফিরে আসতেন মাতৃভূমিতে।  ভাষার মাসের পুরো সময়টা কাটিয়ে আবার ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।  কিন্তু তিনি আর ফিরতে পারেননি। দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ মারা যান তিনি।

প্রায় ৬ বছর পর সেই ভাষার মাসেই রায় হতে চলেছে এই মামলার। এ প্রসঙ্গে তার স্বজনরা বলছেন, বিচার হলে অভিজিতের আত্মা শান্তি পাবে। প্রিয় ভাষার মাসেই খুনিদের ফাঁসির রায় হবে।  

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ধার্য হওয়ার পর অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করবো, নিরাপরাধীরা যেন শাস্তি না পায়।  প্রকৃত অপরাধীরা যেন সাজার আওতায় আসে।  নিশ্চয়ই বিচারে  তা উঠে এসেছে। বিচারক এটা দেখে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করেই রায় দেবেন। আমরা চাই, অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার সাথে ৬ আসামি জড়িত আমরা রাষ্ট্রপক্ষ তা আদালতে তুলে ধরেছি।  আসামিদের একেকজনের ভূমিকা ছিল একেক রকম। ফারাবীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। আরাফাত সরাসরি ঘটনা ঘটিয়েছে। বাকিরা ছিল গার্ড হিসেবে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।  আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকে মামলায় অনেক ত্রুটি রয়েছে।  মামলার পর থেকে তদন্ত, চার্জশিট, চার্জগঠন এরপর ট্র্যায়েলে এসে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি আমরা।  এ মামলার কোন আই উইটনেস নেই। এ ঘটনার কেউ প্রত্যেক্ষ কোনো সাক্ষী দেয়নি। শুধুমাত্র তদন্ত কর্মকর্তা যা শুনেছেন তাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একটা ফর্মাল সাক্ষী বলা যায় মাত্র। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি, তারা খালাস পাবে।

উল্লেখ্য, অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে বই প্রকাশ ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীসহ দেশে আসেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়।  ওইদিন রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসির সামনে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অভিজিৎ। গুরুতর আহত হন বন্যা। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় তদন্ত করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছরের ১ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

২১ জানুয়ারি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৭ জানুয়ারি কারাগারে থাকা চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। দুই আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেননি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন।

আসামিরা হলেন- বরখাস্তকৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান সাজ্জাদ ওরফে শামস্ ও শাফিউর রহমান ফারাবী।  মেজর জিয়া এবং আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন। অপর চার আসামি কারাগারে আছেন।

মামুন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়