ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কেউ খারাপ হলে কি তাকে মেরে ফেলতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২১ মে ২০২১   আপডেট: ২০:৫৯, ২১ মে ২০২১
‘কেউ খারাপ হলে কি তাকে মেরে ফেলতে হবে’

সাহিনুদ্দিন সন্ত্রাসী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা আছে; আদালতে আসামিপক্ষের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, ‘কেউ খারাপ হলেই কি তাকে মেরে ফেলতে হবে?’

শুক্রবার (২১ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালতে তিন আসামির রিমান্ড শুনানিকালে এ প্রশ্ন তোলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ এবং আজাদ রহমান।

রাজধানীর পল্লবীতে ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল, জহিরুল ইসলাম বাবু ওরফে বাইট্টা বাবু এবং নুর মোহাম্মদ হাসানের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দিপু নামের আরেক আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন চার আসামিকে আদালতে হাজির করেন। দিপুকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন এবং আউয়ালসহ তিনজনের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই তিন আসামিসহ আরও কিছু লোক আধিপত্য বিস্তারের জন্য এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে থাকে। এই তিন আসামি সাহিনুদ্দিন হত‌্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মর্মে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা।

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হত‌্যার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য এজাহারনামীয় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার, অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

তারা বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক এবং নিষ্ঠুর ঘটনা। হত্যাকাণ্ডের সময় ভিকটিমের সন্তান তার সঙ্গেই মোটরসাইকেলে ছিলেন। আসামিরা সুকৌশলে ঘটনাস্থলে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিষ্ঠুরতম উপায়ে সন্তানকে একটি গ্যারেজে আটকে রেখে তার বাবাকে হত্যা করে। বাবাকে বাঁচাতে সন্তান চিৎকার করতে চাইলেও তাকে তা করতে দেওয়া হয়নি। বাবার কাছে যেতে চাইলেও যেতে দেওয়া হয়নি। বাবাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও যেতে দেওয়া হয়নি। মামলাটি স্পর্শকাতর। আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর হোক। তাহলে যারা পলাতক আছে, তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা যাবে।’

আসামিদের পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেন, সাহিমউদ্দিন জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, ‘আসামিরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনাস্থল তার বাসা থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। হেয়প্রতিপন্ন করতে তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। সাহিনুদ্দিনের সঙ্গে আউয়াল সাহেবের জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। প্রকল্পের জমি আত্মসাৎ করতে এম এ আউয়ালকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।‘

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘সাহিনুদ্দিন সন্ত্রাসী ছিল। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা আছে। এম এ আউয়াল সম্মানিত ব্যক্তি, সাবেক সংসদ সদস‌্য। ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে জড়ানো হয়েছে। তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। তার জামিন প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষর আইনজীবীরা বলেন, ‘কেউ খারাপ হলেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে তাকে মেরে ফেলতে হবে? এম এ আউয়াল সাবেক সংসদ সদস‌্য। তারাই তো সংসদে আইন পাশ করেন। আইন পাশ করে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেবেন। ঘটনাস্থল থেকে বাসার দূরত্ব ৬ কিলোমিটার বা ৬ হাজার কিলোমিটার হোক, তিনি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে হত্যায় অংশ নিয়েছেন। সন্তানের সামনে বাবাকে হত্যা করা হলো। বাবা চরম দুশমন হলেও কোনো সন্তান এ মৃত্যু মেনে নিতে পারে না। রিমান্ড আবেদন যৌক্তিক। তদন্তে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে, সংসদ সদস‌্য দোষী না নির্দোষ।‘

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে ভৈরবের একটি মাজার থেকে এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মে পল্লবীতে ৬ বছরের ছেলে মাশরাফির সামনে বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ৩১ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে এ হত‌্যাকাণ্ড ঘটে। সাহিনুদ্দিন পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনে সিরামিক রোডের বাসিন্দা।

সাহিনুদ্দিনকে হত‌্যার ঘটনায় তার মা আকলিমা ২০ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়