শিক্ষার্থীর বিয়ে, অতপর
পাত্র পুলিশ কর্মকর্তা। এমন পাত্র সচরাচর পাওয়া যাবে না। এ লোভ বা তাড়নাই মেয়েটির ইচ্ছার বাইরে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেয় বাবা-মা। তবে শেষ পর্যন্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ওই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।
রোববার (৩০ মে) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় আরও জানানো হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান অপ্রাপ্তবয়ষ্ক এক ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী বিয়ের বয়স হয়নি মেয়েটির। তবে, মেয়ের বাবা মা যে বায়োডাটা দেখিয়েছেন তাতে মেয়েকে তারা প্রাপ্তবয়ষ্ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভালো পাত্র পাওয়া গেছে; হুট করেই বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণ শেষ করে মাত্র কাজে যোগ দিয়েছেন।
অবশ্য মেয়েটির বিয়ের ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু পরিবারের চাপ ও ভয়ে পাত্র পক্ষের সামনে বিয়েতে অমত করতে পারেনি। নানাভাবে তার অমত জানিয়েছিল পরিবারকে।
পুলিশ আরও জানায়, মেয়েটি তার বাবা চাচা ও পরিবার তার মতকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। চাপা পড়েছে তার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। বিয়েটা পারিবারিকভাবে অনেকটা মেয়ের পরিবারের আগ্রহেই হয়েছে। তাদের একটাই কথা, সব সময় ভালো পাত্র পাওয়া যায় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বিয়ে করতে হয়েছে। পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে পাচ্ছিল না মেয়েটি। একা লড়াই করার শক্তিও তার ছিল না। তার, এই অসহায়ত্বের কথা বন্ধুবান্ধব কাউকে বলারও সুযোগ পায়নি সে। হুট করেই হয়েছে বিয়েটা। তার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তার সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েই হয়েছিল বিয়েটা। তবে বিয়ের দুদিন পর মেয়েটি সুযোগ পায় তার কোনো এক বন্ধুকে বিষয়টি জানাতে। সেই বন্ধুর থেকে জেনেছে অন্যরা।
কিন্তু, কি আর করা! বিয়ে তো হয়েই গেছে। তবুও, একজন সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে জানায় বিষয়টা। মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফউদ্দিনকে নির্দেশনা দেয় দ্রুত মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রকার কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখতে। মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয় ওসিকে। ওসি তৎপরতার সাথে মেয়েটির বাড়িতে পুলিশের একটি টিম পাঠান। পুলিশের উপস্থিতিতে মেয়েটি সাহসী হয়ে ওঠে। বাড়িতে তার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে পুলিশের সাথে চলে আসে সে। মেয়েটির সাথে কথা বলে মিডিয়া উইং। সুযোগ ও সাহস পেয়ে মেয়েটি সেই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদের ইচ্ছা ব্যক্ত করে।
এ বিষয়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে অবহিত করা হয়। তিনি মেয়েটির অধিকার ও ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ সমুন্নত রাখতে উপযুক্ত সহায়তা দিতে নির্দেশ দেন। পরে মেয়েটির প্রবল ইচ্ছায় এবং একটি নারী অধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় আইনি উপায়ে সেই দিনই বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। মেয়েটির স্বামী ও উল্লিখিত কর্মকর্তা এবং তার পরিবার পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছেন।
বিচ্ছেদের পর মেয়েটি তার পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তার পরিবারও তাকে বাড়িতে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। এ পরিস্থিতিতে, মেয়েটিকে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সেইফ হোমে রাখা হয়। পুলিশের সেইফ হোমে অতিথি হিসেবে দুদিন অবস্থানের পর পুলিশের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের ইচ্ছায় পুনর্মিলন ঘটে। এরপর, আদালতের মাধ্যমে মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিক এবং সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ভুক্তভোগীদের নাম পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ।
মাকসুদ/সাইফ
আরো পড়ুন