ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নারী পাচার চক্রের ৫০ সদস্যের সন্ধান, গ্রেপ্তার ৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১ জুন ২০২১   আপডেট: ২২:১৯, ১ জুন ২০২১
নারী পাচার চক্রের ৫০ সদস্যের সন্ধান, গ্রেপ্তার ৪

আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের চার সদ‌স‌্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের ৫০ সদস্যের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম রাফি ওরফে বস রাফিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ‌্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ‌্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (৩১ মে) রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বস রাফির সঙ্গে নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা, ইসমাইল হোসেন ও আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা প্রতারণা করে ও প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নারী পাচার করত। এ চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ৫০ জন জড়িত। 

ভারতে গ্রেপ্তার করা টিকটক হৃদয় রাফির অন্যতম সরবরাহকারী বা এজেন্ট। রাফির আরও অনেক এজেন্ট আছে। হৃদয় তরুণীদের টিকটক বানানোসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখাত। পরে তাদের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বস রাফির মাধ‌্যমে পাচার করত। মূলত, যৌন ব‌্যবসায় ব‌্যবহার করার জন‌্য তাদের পাচার করা হতো। পাচারের পর তাদের বিভিন্ন মাদক সেবন করানো হতো। পরে জোরপূর্বক অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো, যাতে তারা এ ধরনের কাজে বাধ্য হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, বৈধ ও অবৈধ—উভয় উপায়ে সীমান্ত পার করানো হতো নারীদের। তারা কয়েকটি ধাপে পাচার করত। প্রথমত, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহে আনা হতো। পরে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সেফ হাউজে রাখা হতো। সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে সীমান্ত পার করা হতো। ভারতের এজেন্টরা তাদের গ্রহণ করে সীমান্তের নিকটবর্তী সেফ হাউজে রাখত। পরে সুবিধাজনক সময়ে কলকাতার সেফ হাউজে পাঠানো হতো। কলকাতা থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে নেওয়া হতো। পাচার করা নারীরা বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর পর রাফি তাদের গ্রহণ করে বিভিন্ন সেফ হাউজে নিয়ে যেত। পরে ব্ল্যাকমেইল ও নির্যাতনের মাধ্যমে যৌন কাজে বাধ্য করা হতো। সেফ হাউজগুলোতে নারীদের মাদক সেবন এবং পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। পাচারকৃত নারীদের ১০-১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন খদ্দেরের কাছে সরবরাহ করা হতো। এক্ষেত্রে পরিবহন ও খদ্দেরের নির্ধারিত স্থানে অবস্থানের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব‌্যবস্থা নেওয়া হতো। রাফি একসময় এ ধরনের পরিবহনকাজে নিয়োজিত ছিল। রাফি তামিল ভাষা রপ্ত করেছিল। একপর্যায়ে সে রিং লিডার হয়ে যায়। ভারতের এজেন্ট তাকে খদ্দেরপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা কমিশন দিত।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, রাফি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ৮ বছর ধরে সে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যাতাযাত করত। সে সেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার, হোটেলে-রিসোর্টে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। পরে কাপড়ের ব্যবসা করত। পাঁচ বছর ধরে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত সে। দুই বছর আগে তার সঙ্গে টিকটক হৃদয়ের পরিচয় হয়। টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে সে অর্ধশতাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করেছে।

ওই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়