ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তিন ধাপে মানবপাচার হয়: র‌্যাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ১১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:১০, ১১ জুলাই ২০২১
তিন ধাপে মানবপাচার হয়: র‌্যাব

বাংলাদেশ থেকে তিন ধাপে লোভনীয় চাকরির কথা বলে মানবপাচার করছে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।  প্রথমে নিজস্ব এজেন্ট দিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের নির্বাচন, এরপর তাকে লিবিয়া, পরে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে অবৈধভাবে সাগরপথে ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে কাওরানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার মঈন আলী এসব কথা জানা।

খন্দকার মঈন আলী বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১০ জুলাই ও ১১ জুলাই ভোর পর্যন্ত র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মো. আশিক, মো. আজিজুল হক, মো. মিজানুর রহমান মিজান, নাজমুল হুদা, সিমা আক্তার, হেলেনা বেগম এবং  পলি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।  এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ২টি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার বই, ২টি হিসাব নথি উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।  চক্রটি বিদেশি চক্রের যোগসাজশে অবৈধভাবে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে।  তারা মূলত ৩টি ধাপে মানুষ পাচার করে থাকে।  এক হলো বিদেশে গমনেচ্ছুক নির্বাচন।  দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় প্রেরণ এবং তৃতীয়ত লিবিয়া থেকে ইউরোপে নিয়ে যায়। গমনেচ্ছুক নির্বাচনকালে এই চক্রের দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে।  ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়।  বিদেশে গমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয় ইত্যাদি কার্যাবলী এ সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়ে থাকে।  পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিগুলো পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেয়।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে তাদের এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রার্থীদের সামর্থ্য অনুযায়ী ধাপ নির্বাচন করে থাকে। ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা ৭-৮ লাখ টাকার অধিক অর্থ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ-৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি ২.৫-৩ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর নিকট স্বজনের কাছ থেকে নেয়।  আবার বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় সিন্ডিকেটটি বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া রুট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বিদেশি এজেন্টদের যোগসাজসে ৭/৮ দিন অবস্থান করানো হয়ে থাকে। বেনগাজীতে (লিবিয়া) প্রেরণের লক্ষ্যে বেনগাজী থেকে এজেন্টরা কথিত মারাকাপা নামক একটি ডকুমেন্ট দুবাইতে প্রেরণ করে থাকে।  যা লিবিয়াতে যাত্রার আগে দুবাইয়ে অবস্থানরত ইউরোপগামীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অতঃপর ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদের বেনগাজী লিবিয়ায় প্রেরণ করা হয়।  বেনগাজী থেকে ত্রিপোলীতে স্থানান্তর করে। যারা লিবিয়া পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করে থাকে তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যপ্রাচ্যে ট্রানজিট করিয়ে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠানো হয়। এই চক্রের বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের ‘রুবেল’ দুবাইতে অবস্থান করে।

কমান্ডার মঈন আলী বলেন, লিবিয়া থেকে ইউরোপে নেওয়ার জন্য ত্রিপোলীতে পৌঁছানোর পর লিবিয়া এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন জন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করে। ভিকটিমদের ত্রিপোলীতে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করায়।  ত্রিপোলীতে অবস্থানকালীন সময় সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধির দ্বারা ইউরোপগামীদের স্বজনদের থেকে অর্থ আদায় করে থাকে।  অতঃপর সিন্ডিকেট সদস্যদের নিকট অর্থের বিনিময়ে ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের হস্তান্তর করা হয়। 

তিনি বলেন, পরে সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানে নিয়ে যায়।  পরে সিন্ডিকেট সমুদ্রপথ অতিক্রম করার জন্য নৌযান চালনা এবং দিক নির্ণয়যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুসাঙ্গিক বিষয়ের ওপর নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।  একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোর রাতে এক সঙ্গে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেলের হয়ে ইউরোপের পথে রওনা দেয়। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে গমনকালে ভূমধ্যসাগরের মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং জীবনাবসানের ঘটনা ঘটে থাকে। ভূমধ্যসাগরে নৌকায় উঠাকে তারা ‘গেম’ বলে অবহিত করে থাকে।  অর্থাৎ সেখানে ঝুঁকি আছে, আবার রয়েছে উন্নত জীবনের হাতছানি। ভূমধ্যসাগরের বিগত কয়েকটি নৌকা ডুবি ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিখোঁজ/নিহত বাংলাদেশিদের এই চক্র পাচার করেছে। 

তিনি আরও বলেন, চক্রের মাধ্যমে অনেকে অবৈধপথে ইউরোপে গমনাগমন করেছে আবার অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছে।  সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুবেল দুবাইতে অবস্থান করে। অবৈধ পাচার চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করছে।  রুবেল ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া অবস্থানের মাধ্যমে আন্তজার্তিক মানবপাচার চক্রের সাথে বিশেষ যোগসাজশ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে (লিবিয়া) মানবপাচার সংক্রান্ত রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

/মাকসুদ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়