ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

র‌্যাবের কব্জায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৩ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ২০:৪১, ৩ আগস্ট ২০২১
র‌্যাবের কব্জায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে সদ‌্য বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। হেলেনা জাহাঙ্গীরের সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখভাল করতেন হাজেরা খাতুন। অন‌্যদিকে, সানাউল্ল‌্যাহ নূরী জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাজেরা খাতুন এবং সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

খন্দকার আল মঈন জানান, হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেন। এর পর তিনি রাজধানীর মিরপুরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন একটি পোশাক কারখানায় প্রশাসন বিভাগে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকটাত্মীয়। পাশাপাশি, কর্মদক্ষতার কারণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন হাজেরা। ২০১৬ সালে তিনি জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম হিসেবে যোগ দেন। হাজেরা খাতুন মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন।

তিনি আরও জানান, হাজেরা খাতুন জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউন লিংকে সম্প্রচার হয়ে আসছে। এর ফিকোয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই ফ্রিকোয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে টেলিভিশন চ‌্যানেল সম্প্রচারের অনুমোদন নেই। এই টিভি বাংলাদেশের প্রায় ৫০ জেলায় সম্প্রচার হতো। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষ‌্যে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অধিক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। জয়যাত্রা টিভির জেলা প্রতিনিধিদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং উপজেলা প্রতিনিধিদের ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে এককালীন দিতে হতো। এছাড়া, প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারিত হতো। এসব দেশে ১ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হতো। তারা প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতো। নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ সংগ্রহ ও যাবতীয় হিসাবপত্রের দায়িত্ব ছিল হাজেরা খাতুনের ওপর। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা, উৎসাহ বা চাপ, নির্দেশনায় জয়যাত্রা টিভির কোনো কোনো প্রতিনিধি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। যেসব বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে প্রচারিত হত না সেগুলো জয়যাত্রা টিভিতে প্রচার করা হতো। হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজেও ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার চালানো হতো। জয়যাত্রা টিভি থেকে চাকরিচ্যুতদের একইভাবে হেনস্থা করা হতো।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হাজেরা জানিয়েছেন, তারা জয়যাত্রা টিভির বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে নেতিবাচক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। মূল মিডিয়া জগতের বিপরীতে তারা একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন, যেখানে ৫ হাজার সংবাদকর্মীর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তিনি (হেলেনা) দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি ঢাকায় কর্মী সমাবেশ করতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের শোডাউনে তাদের ব্যবহার করতেন।’

জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে হাজেরা খাতুন র‌্যাবকে জানিয়েছেন, এ ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনে প্রায় ২০০ জন সদস্য আছে। তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার সামান্য অর্থই মানবসেবায় ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হতো। অবশিষ্ট অর্থ হেলেনা জাহাঙ্গীরের সন্তানদের নামে সঞ্চয় করা হতো।

সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়-ভীতি দেখাতেন। তার নামে চাঁদাবাজি অভিযোগও রয়েছে। তিনি গাজীপুরে পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশ জয়যাত্রা টিভিতে ব্যয় করতেন।

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়