নানা পেশার আড়ালে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাতো উজ্জ্বল
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার জেএমবির একাংশের নেতা উজ্জ্বল
কখনো দোকানের কর্মচারী, কখনো ফেরিওয়ালা, আবার কখনো রিকশাচালক। এসব ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিল মোহাম্মদপুর বসিলা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির একটি গ্রুপের নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার। বিএ পাস করা উজ্জ্বল একসময় শিক্ষকতাও করত।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বসিলার জঙ্গি আস্তানা থেকে উজ্জ্বলকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
উজ্জ্বল ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহের একটি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতাও শুরু করে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় সে চাকরিচ্যুত হয়। ২০০২ সালে মুক্তাগাছা সফররত এক জঙ্গিনেতার বয়ান শুনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় উজ্জ্বল। পরে সে শায়খ আব্দুর রহমানের কাছ থেকে বায়াতপ্রাপ্ত হয়। উজ্জ্বলসহ কয়েকজন জামালপুরে একটি আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেয়। সে অতি দ্রুত ময়মনসিংহের আঞ্চলিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উজ্জ্বল শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও সালাহউদ্দিন সালেহীনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল। উজ্জ্বল জেএমবি শীর্ষ নেতাদের ময়মনসিংহ সফরকালে বিশেষ দায়িত্ব পালন করত। নেতাদের গোপন আস্তানায় নেওয়া, মিটিং ও বয়ান আয়োজনে ভূমিকা রাখত উজ্জ্বল।
খন্দকার আল মঈন জানান, সম্প্রতি ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার হওয়া জুলহাসসহ ১০ জন জেএমবি সদস্য ২০০৩ সালে উজ্জ্বলে কাছে বায়াত নেয়। বায়াত নেওয়া এসব জঙ্গির মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে। কেউ কেউ এখনও আত্মগোপনে আছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
উজ্জ্বল ২০০২ পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ এলাকায় জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ করত। সে ধর্মীয় আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিযে অর্থ সংগ্রহ করে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যয় করত। সে ২০০৩ সালে মুক্তাগাছায় ব্র্যাকের অফিসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
নাশকতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানায় ২০০৭, ২০১২, ২০১৫ এবং ২০২০ সালে মামলা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। ২০০৭ সালের স্থানীয় জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সম্মুখীন হয় উজ্জ্বল। সে সময় সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। একই বছর নিকটাত্মীয় রফিক মাস্টার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল উজ্জ্বল। রফিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দেয় বলে জানতে পারে তারা। ২০০৭ সালের মামলার পর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায় উজ্জ্বল। ২০০৮ থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে ও নাম পরিবর্তন করে অবস্থান নেয় সে।
আত্মগোপনে থাকাকালে সে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক ও রাজমিস্ত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ২০১২ সালে সে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার হয়। ২ বছর কারাগারে ছিল সে। জেল থেকে বের হয়ে ২০১৫ সালে আবার বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হয় উজ্জ্বল। ২০১৬ সালে জামিনে বের হয়ে সে পুনরায় আত্মগোপনে চলে যায়। এ সময় সে ছদ্মবেশে রাজবাড়ী, রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অবস্থান করে জঙ্গি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে।
জেএমবি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়লে সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হয়। ফলে, তারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উজ্জ্বল তার বিশ্বস্ত ও পুরাতন সহযোগীদের সংগঠিত করে জেএমবির একটি গ্রুপ তৈরির চেষ্টা চালায়। সে ওই গ্রুপের মূল সমন্বয়ক। তার অর্ধশতাধিক অনুসারী আছে বলে জানা যায়। গ্রুপটি ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ কয়েকটি জেলায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। অধিকাংশ দায়িত্বশীল ব্যক্তি মূল ধারার জেএমবির পুরাতন সদস্য। এরকম কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা প্রশিক্ষণ, দাওয়াত, রসদ ইত্যাদি বিষয় দেখভাল করে। গ্রেপ্তারকৃত উজ্জ্বল প্রত্যক্ষভাবে অপারেশন কার্যক্রম তদারকি করে থাকে। তাদের আইটি সেক্টরকেও সমৃদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অপারেশন দলের পাশাপাশি তারা ‘সাইবার ফোর্স’ গঠনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রথাগত দাওয়াতের পাশাপাশি সদস্য বাড়াতে তারা অনলাইনে সক্রিয় আছে। সংগঠনের অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য উজ্জ্বল নাশকতা, ডাকাতি, ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করতে তার সদস্যদের নির্দেশ দিতো।
ঢাকা/মাকসুদ/রফিক
আরো পড়ুন