ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘কিছুই হবে না’ বলে ডিআইজি মিজানকে আশ্বস্ত করেন এনামুল বাছির

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১  
‘কিছুই হবে না’ বলে ডিআইজি মিজানকে আশ্বস্ত করেন এনামুল বাছির

মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছির (ফাইল ফটো)

বরখাস্তকৃত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে করা ঘুষের মামলায় আরও দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ সাক্ষ্য ডিআইজি মিজানের অর্ডারলি কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন এবং তার (ডিআইজি মিজান) স্ত্রীর দোকানের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম। আগামী ১২ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।

জবানবন্দিতে কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন জানান, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ডিআইজি মিজানের উত্তরার বাসা থেকে তিনি দুটি ব্যাগ গাড়িতে তুলে দেন। ব্যাগে ২৫ লাখ টাকা ও কিছু বই ছিল। পরে ডিআইজি মিজান সাদ্দাম হোসেনকে রাজারবাগে নামিয়ে দেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলেন। কিন্তু ডিআইজি মিজান সাদ্দাম হোসেনকে রমনা পার্কের সামনে নিয়ে আসেন এবং জানান, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য একজন লোক আসবে। তার সঙ্গে কথা শেষে সাদ্দাম হোসেনকে যাওয়ার অনুমতি দেন ডিআইজি মিজান। কিছুক্ষণ পরে লোকটি পার্কে আসেন। তারা দুজন পার্কে গিয়ে কথা বলেন। এরপর তারা গাড়িতে ওঠেন। ডিআইজি মিজান ওই লোককে রাজারবাগ মোড়ের সামনে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের গলিতে নামিয়ে দিতে গাড়িচালককে নির্দেশ দেন। গাড়িতে যাওয়ার সময় তারা অনেক কথা বলেন। মিজান ওই লোককে জানান, ব্যাগে ২৫ লাখ টাকা আছে। পরে ওই লোককে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের গলিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। লোকটি যাওয়ার পর সাদ্দাম ডিআইজি মিজানের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কে? তখন ডিআইজি মিজান তাকে জানান, লোকটি দুদকের কর্মকর্তা এনামুল বাছির। সেদিন সাদ্দাম হোসেন রাজারবাগ ব্যারাকে চলে যান।

তিনি জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজানের বাসা থেকে একটি শপিং ব্যাগ ও একটি হ্যান্ডবল গাড়িতে তুলে দেন সাদ্দাম হোসেন। ব্যাগে টাকা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানান, ব্যাগে ১৫ লাখ টাকা আছে। তারা সেদিনও রমনা পার্কের সামনে আসেন। গাড়িতে বসে এনামুল বাছিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ডিআইজি মিজান। তাকে রমনা পার্কের সামনে আসতে বলেন মিজান। এনামুল বাছির এলে তারা পার্কের ভেতরে যান। কথা শেষে তারা আবার গাড়িতে ওঠেন। এনামুল বাছিরকে শান্তিনগর মোড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে বলেন ডিআইজি মিজান। সেদিনও গাড়িতে কথা বলেন তারা। এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানকে বলেন, ‘আপনার মামলায় কিছু নেই। আপনার কিছু হবে না।’ পরে এনামুল বাছিরকে শান্তিনগর মোড়ে নামিয়ে দেন ডিআইজি মিজান। এনামুল বাছির টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে যান।

সাদ্দাম হোসেন আরও জানান, ৩০ মে গুলশান পুলিশ প্লাজায় যান ডিআইজি মিজান। এনামুল বাছির সেখানে আসেন। তারা সেখানে কথা বলেন। এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানকে বলেন, আপনার মামলায় কোনো কাগজপত্র নেই। আপনার কিছু হবে না।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে  গুলশান পুলিশ প্লাজায় আসেন এনামুল বাছির। তখন ডিআইজি মিজান বলেন, ‘টাকা দিলাম, তারপরও আমার নামে কেস হলো।’ এই কথোপকথনের পর তারা বের হয়ে যান। 

এ নিয়ে মামলাটিতে ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। এদিন মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছিরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। গত ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন শেখ মো. ফানাফিল্লাহ।

৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর আদালত চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করে মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বদলির আদেশ দেন। গত ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়