ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সুইসাইড চিরকুটে’ যা লিখে গেছেন সেই চিকিৎসক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ১৭ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৮, ১৭ অক্টোবর ২০২১
‘সুইসাইড চিরকুটে’ যা লিখে গেছেন সেই চিকিৎসক

জয়দেব চন্দ্র দাস। ছবি : সংগৃহীত

‘জীবন ও মৃত্যু সমান, বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমার এ মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। মারা যাওয়ার আগে এমনই একটি চিরকুট লিখে যান নিকুঞ্জের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া সেই চিকিৎসক জয়দেব চন্দ্র দাস (২৫)। 

এই সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। কেননা মৃত্যুর আগে তিনি শরীরে ইনজেকশন নেন। এ ছাড়া মৃতদেহের পাশে একাধিক সিরিঞ্জ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার বাম হাতে একটি চিরকুটও মিলেছে, যেখানে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তারপরও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহের ময়না তদন্ত করা হচ্ছে।’

তাহলে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন? রাইজিংবিডির প্রশ্নে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিক ও চিরকুট লেখা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে এটি প্রেমঘটিত কারণে হতে পারে। সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর নিকুঞ্জ ২ নম্বর রোডের বাসা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি যে চিরকুটটি পাওয়া গেছে সেটি মারা যাওয়া চিকিৎসকের নিজের হাতে লেখা কিনা তার রাসায়নিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের কললিস্টের তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি মৃত্যুর আগে কারো সঙ্গে কথা বলেছিলেন কিনা, কোন ধরণের কথাবার্তা হয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে থানা পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দারাও কাজ শুরু করেছে।

নিহতের মামা বিমল চন্দ্র দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জয়দের শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কারো সঙ্গে কখনো ঝগড়া বিবাদে জড়ায়নি। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকা আসি। সবেমাত্র ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছে। ঢাকায় চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছিল। গত দেড় মাস হলো নিকুঞ্জের বাসায় ভাড়া ওঠে।’

তার সঙ্গে কোনো মেয়ের সম্পর্ক আছে- এমন প্রশ্নে বিমল বলেন, জানা নেই।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গত ৪ দিন ধরে ওই চিকিৎসক বাইরে বের হননি। পাশাপাশি ভবনের অন্যদের সঙ্গেও তিনি তেমন মিশতেন না। শনিবার রাতে জয়দেবের কক্ষ থেকে পচা গন্ধ বের হতে থাকে। আশপাশের লোকজন কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলে সেটি লক করা পাওয়া যায়।

বাড়ির কেয়ারটেকার জানে আলম বলেন, ‘স‌্যার কারো সঙ্গে তেমন কোনো কথাবার্তা বলতেন না। পাঁচ হাজার টাকায় কক্ষটি ভাড়া নেন। কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করতে দেখিনি। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে।’ এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে আমাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) প্রতিনিধি বুলবুল চৌধুরী রোববার বিকেলে জানান, ‘নিহতের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে স্বজন না আসায় মরদেহ মর্গে আছে। তার বাবার নাম দিলিপ চন্দ্র দাস। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের দক্ষিণ কুমারপাড়ার সালন্দায় নিহতের গ্রামের বাড়ি।

উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার রাতে নিকুঞ্জের ওই বাসার ৮ম তলা থেকে জয়দেবের পচা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মাকসুদ/এনএইচ  

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়